বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্কুলে ঝুলছে তালা, বই না পেয়ে ফিরে গেল শিক্ষার্থীরা

  •    
  • ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ১১:২০

অষ্টম শ্রেণির বই নিতে এসেছে জান্নাতুল। সে বলে, ‘প্রথম দিন পাঁচটি বই পেয়েছি। আজ স্কুলে এসে দেখি সব রুমে তালা।’

সকাল হতেই বই নিতে স্কুলে এসেছে শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিন কিছু নতুন বই পেলেও সব মেলেনি। তাই বাকি নতুন বই নিতে সকাল থেকেই স্কুলে হাজির তারা। কেউ এসেছে মাকে নিয়ে, কেউ বাবাকে নিয়ে। তবে স্কুলে এসেই মন খারাপ তাদের। কারণ স্কুলের সব রুমে ঝুলছে তালা।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রুপাপাত ইউনিয়নের বামনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে এমন ঘটনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখায় বই উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ভর্তি হতে আসা এবং বই নিতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সেশন ফি, ভর্তি ফিসহ ৭০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিভাবকরা বলছেন, টাকা না দিলে বই মিলছে না শিক্ষার্থীদের। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলটির সাময়িক বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা।

সরকারি ছুটি না থাকলেও সোমবার স্কুলে তালা ঝুলিয়েছেন বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক- এমনটাই দাবি স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির।

সোমবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিসসহ সব কক্ষে তালা দেয়া। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বই নিতে এসে শিক্ষকদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

অষ্টম শ্রেণির বই নিতে এসেছে জান্নাতুল। সে বলে, ‘প্রথম দিন পাঁচটি বই পেয়েছি। আজ স্কুলে এসে দেখি সব রুমে তালা।’

অষ্টম শ্রেণির মিম বলে, ‘আমাকে শুধু বিজ্ঞান বই দিয়েছে। অন্য বই পাইনি।’

উপজেলার কদমী গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাগর মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে হামিম মিয়াকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য এসেছি। কিন্তু শিক্ষকরা না থাকায় ভর্তি না করে বই না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।’

ডহরনগর গ্রামের মোরশেদা বেগম বলেন, ‘তার যমজ দুই ছেলে এ বছর অষ্টম শ্রেণি থেকে পাস করে নবম শ্রেণিতে উঠেছে। তাদের দুই ভাইকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি ও বই নিতে এসেছি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বলেছেন ভর্তি ও সেশন ফিসহ ৭০০ টাকা লাগবে। টাকা না দিলে ভর্তি হতে পারবে না।’

এ ব্যাপারে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ বলেন, বই উৎসবের প্রথম দিন বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্কুলে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বই দিয়ে চলে যান। পরে সভাপতি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কিছু বই দিয়েছেন। সোমবার ভোরে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্কুলের সব রুম তালা দিয়ে চলে যান। আমরা এখন কোনো শিক্ষার্থীকে বই দিতে পারছি না।’

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাইয়ুম মোল্যা বলেন, ‘বই উৎসবের প্রথম দিন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সকালে স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই দিয়েছেন। জানতে পেরে সব শিক্ষার্থীকে টাকা দিতে নিষেধ করি। পরে প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে চলে যান। পরে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে বই দিই।’

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অভিযোগ, সেশন ফিসহ যাবতীয় ফি পরে নেয়া হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা মানছেন না। তিনি বলেন, এ বছর সেশন ফিসহ কোনো কিছুই নির্ধারণ করা হয়নি। তা ছাড়া অক্টোবরের ৩০ তারিখে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মোল্যাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মোল্যা। তিনি বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি বই দেয়ার কথা বলে কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবে যারা পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমাদের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোনো টাকা নেয়া হয়নি।’

স্কুলে তালা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অফিসের জরুরি কাজে আমি ঢাকাতে এসেছি। তবে স্কুলের চাবি আমার কাছে নেই।’

তিনি বরখাস্তের ব্যাপারে বলেন, ‘আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ তিনজন সদস্য। কিন্তু স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির অন্য নয় সদস্যই আমার পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে আমাকে কীভাবে বৈধভাবে বরখাস্ত করা হলো। আমি সরকারিভাবে বৈধ।’

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্কুলটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে, যা ঢাকা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত জানেন। আমরা বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে আমি আগামীকাল মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) স্কুলটিতে যাব।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ছাড়া এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর