বরিশাল দশম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে ও ধর্ষণের অভিযোগ দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের এক নারী কর্মকর্তা।
সোমবার দুপুরে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই নালিশি অভিযোগটি দেয়া হয়।
পরে বিচারক মো. ইয়ারব হোসেন অভিযোগটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী হুমায়ন কবির।
তিনি আরও জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ বিষয়ে শুনানি হবে।
নালিশি অভিযোগের বিবাদী মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বোরানাল গ্রামের আব্দুল আউয়াল খন্দকারের ছেলে।
নালিশি অভিযোগ জমা দেয়া আইনজীবী বিপ্লব কুমার রায় জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে বাদী নারী ও বিবাদী পুলিশ কর্মকর্তার পূর্বপরিচয় ছিল। কর্মজীবনে বরিশাল অফিসার্স ক্লাবে তাদের দেখা হয়। পূর্বপরিচয়ের সুবাদে তারা প্রায়ই ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলতেন।
একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হলে দুজনই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বাদীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বিবাদী। এ ঘটনার জের ধরে কিছুদিন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন ওই নারী কর্মকর্তা।
কিছুদিন পর বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় দুজনের আবার দেখা হলে অনুনয়-বিনয় করে আবারও সুসম্পর্ক স্থাপন করেন মাহমুদুল হাসান। এ সম্পর্কের জের ধরে বাদীকে ডিভোর্স দেন তার স্বামী।
এ অবস্থায় ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দশম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের বাংলোতে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী বাদীকে বিয়ে করেন বিবাদী। পরবর্তী সময়ে তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অংশগ্রহণও করেন।
গত বছরের মার্চে ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রথম স্ত্রী-সন্তানসহ দশম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের বাংলোতে আসেন। তখন দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ের কাবিন করতে চাপ দিলে বাংলোর ভেতর বাদীকে বেধড়ক মারধর করেন বিবাদী।
সুস্থ হয়ে দশম আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের অধিনায়কের কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী। পরে কাবিন করতে সম্মত হয়ে বিবাদী জানান, কয়েকটি বিভাগীয় মামলার ঝামেলা শেষ করে এ কাজটি করে ফেলবেন তিনি।
গত ২২ জুলাই বাদীকে রাজধানীর ইস্কাটনে পুলিশ অফিসার্স মেসে নিয়ে যান অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা। এর তিন দিন পর গুলশানে এক বন্ধুর বাসায় কাবিনসহ বিয়ে হয় তাদের।
এর মধ্যে কিছুদিন আগে ফোনে কথা হলে পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকে বিয়ের কথা স্বপ্ন মনে করে ভুলে যেতে বলেন এবং বিয়ের বিষয়টিকে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে গুলি করে হত্যাসহ সহকর্মীদের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানি করারও হুমকি দেন তিনি।
এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে ২০ নভেম্বর স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আইনি নোটিশ পাঠান বাদী। কিন্তু জবাব না পেয়ে ২৭ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় তিনি অভিযোগ দেন।
এ সময় পুলিশ বাদীকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে নালিশি অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান বাদীর আইনজীবী।
মামলার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের মোবাইল ফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।