অনলাইনে বিভিন্ন কনটেন্ট থেকে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার শিকার হয়ে হিজরতের উদ্দেশে ঘর ছাড়া ৯ তরুণ-তরুণীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করেছে র্যাব।
রাজধানীর কুমিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে সোমবার দুপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়ে যাওয়া ৯ তরুণ-তরুণীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ‘নব দিগন্তের পথে’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্থাটি।
পরিবারের কাছে ফেরা তরুণ-তরুণীরা হলেন- আবু বকর সিদ্দিক, ফয়সাল হোসেন, ফারুক হোসেন, আলিফ খান, মুফলিয়া আক্তার, তাজকিয়া তাবাসসুম, জান্নাতুল ফেরদৌস, রুনা আক্তার ও কানিজ ফাতিমা ইফতি।
ওই তরুণ-তরুণীরা জানান, বিভিন্নজনের মাধ্যমে তারা একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হন। ওই গ্রুপে তাদের একজন নেতা ছিলেন, যিনি গ্রুপে হিজরতের গুরুত্বসহ নানা ইসলামিক কনটেন্ট শেয়ার করতেন। এসব দেখে তারা হিজরতের পরিকল্পনা করে ঘর ছাড়েন৷
চট্টগ্রামে গিয়ে নির্জন স্থান না পেয়ে তারা একটি হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে র্যাব সদস্যরা তাদের উদ্ধার করার পর তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। এরপর তাদের কাউন্সেলিং করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসা ৯ তরুণ-তরুণীকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও বই উপহার দেন। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
র্যাব মহাপরিচালক তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ সেবায় অংশগ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়াও সংস্থাটি উগ্রবাদের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী ২১ জনকে ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল মো. কামরুল হাসান ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ। এছাড়া বিশেষ আলোচক ছিলেন মুফতি মানসুর আহমাদ।
র্যাব বলছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দুই হাজার ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ডি-রেডিকালাইজেশনের মতো নতুন পন্থা অনুসরণ করে পথভ্রষ্টদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এরপর তাদেরকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জঙ্গিবাদ একটি আদর্শিক সমস্যা। সুতরাং তা মোকাবেলায় প্রয়োজন ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা। র্যাব শুরু থেকেই ধর্মের এই অপব্যাখ্যা মোকাবেলায় জঙ্গিবাদের Counter Narrative হিসেবে র্যাব ‘জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে। আর তা জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারে ব্যাপক অবদান রাখছে।