অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্তা জানানো হয়।
যাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন অঞ্চল-১ এর উপকর কর্মকর্তা রবিউল করিম খান, ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের স্টোর কিপার রুহুল আলম এবং অঞ্চল-৪ এর রেন্ট অ্যাসিসটেন্ট রমজান আলী।
২০২০ সালের মে মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই দুই জন কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে অপসারণ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
সেই কর্মকর্তা দুজন ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ইউসুফ আলী সরদার। সাঈদ খোকন মেয়র থাকার সময় এই দুই কর্মকর্তা তার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন।
এরপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাকরিচ্যুত করা হয় করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লা হারুনকে। তার বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।
সদ্য বিদায়ী বছরের জুনের শেষে চাকরিচ্যুত করা হয় দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫-এ উপকর কর্মকর্তা সেলিম খানকে। নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর প্রথমে তাকে সচিব দপ্তরে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে সংযুক্ত করা হয়। পরে নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত।
একই সময়ে দুটি আদেশে রাজস্ব বিভাগের ১৭ জন দক্ষ শ্রমিক এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৪ জন অদক্ষ শ্রমিককে কর্মচ্যুত করা হয়।
তিন কর্মীকে চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়, রবিউল করিম খান সংস্থাটির অঞ্চল–১–এর উপকর কর্মকর্তা পদে থাকাকালে ভবন ও স্থাপনার পৌরকর মূল্যায়নকাজে গ্রাহককে অবৈধভাবে পৌরকর কমিয়ে দেয়ার সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
রুহুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি করপোরেশনের দরপত্রের কাজে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ বিনিয়োগসহ বিভিন্ন সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
রমজান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঘুষ–বাণিজ্য থেকে শুরু করে ঠিকাদারদের বিভিন্ন টেন্ডার পাইয়ে দেয়াসহ করপোরেশনের গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের লোকজনের কাছে সরবরাহ করেছেন।
এ ছাড়া করপোরেশনের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানের নামজারি, বাণিজ্য অনুমতিপত্র ও নবায়নকাজে অবৈধ সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন।
বহিরাগত লোক দিয়ে দোকানের ভাড়া, বাণিজ্য অনুমতিপত্র নবায়ন ও নামজারির কাজ করার অভিযোগও ছিল তার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, চাকরি থেকে অপসারণ হওয়া ব্যক্তিরা করপোরেশনের বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন নগদ সুবিধা পাবেন। করপোরেশনের হিসাব বিভাগ থেকে সব দেনা–পাওনা বুঝে নিতে তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করেপোরেশন জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার ফলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।’
নগর ভবনের এক কর্মকর্তা জানান, সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে, করপোরেশন যদি মনে করে যে কাউকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া দরকার, সে ক্ষেত্রে তিন মাসের বেতন দিয়ে তাকে বিদায় করে দিতে পারে।