সৌদি আরবে ছিলেন মসজিদের ইমাম। অনলাইন থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় দেশে ফেরেন আব্দুর রব। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি না ফিরে সরাসরি চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে।
মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি) এমনটা দাবি করেছে। বলা হচ্ছে, আব্দুর রব অনেককে একত্র করেন। গ্রুপটি আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা নিয়েই সংগঠিত হচ্ছিল।
তবে তার আগেই রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে রোববার এই মতাদর্শের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি।
সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সৌদিপ্রবাসী দলনেতা আব্দুর রব, সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তাদেরকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার তাদেরকে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. রশিদুল আলমের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে সিটিটিসি। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আব্দুর রব সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্র করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।’
আসাদুজ্জামান জানান, পরে সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও এক বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেন। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি, তারা প্রথমে টেকনাফে গিয়ে স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং নেবেন। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবেন।
তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরে সবাইকে টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দিলে ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম সেখানে যান। স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আব্দুর রব গত ২২ নভেম্বর দেশে এলে শামীম ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে টেকনাফে নিয়ে যান। সেখানেই তারা অন্যদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সিটিটিসির দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে দল গঠন করেন। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে অবস্থান করছিলেন।
কোনো সাংগঠনিক ব্যক্তি ছাড়া সশস্ত্র জিহাদ সম্ভব কি না, জানতে চাইলে সিটিটিসিপ্রধান বলেন, এখনও তারা সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি। এটা ছিল তাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র জিহাদের আলোচনা করে হিজরত করছিল। এদের প্রথমে তেমন সদস্যসংখ্যা থাকে না, ধীরে ধীরে বাড়ে। তারা টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা করে।
আল-কায়েদার সঙ্গে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের যোগাযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণ করেন। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট দেখে তারা মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
আব্দুর রব কে
জঙ্গিবাদসংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার আব্দুর রব একজন কোরআনে হাফেজ। তিনি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ২০১৯ সালে জুনে সৌদি আরব যান তিনি। সেখানে একটি মসজিদের ইমাম ও পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন রব। সৌদিতে থাকার সময় তিনি অনলাইনে বিভিন্ন পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাঈদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।