বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের গাছি

  •    
  • ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:০৪

নূরুল ইসলাম ঘরামী ৩০ বছর ধরে খেজুরগাছ কাটেন। আগে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই শ গাছ কাটতেন। বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০টিতে। প্রচুর পরিশ্রম আর রস কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে দু-এক বছরের মধ্যে পেশায় ইতি টানবেন।

খেজুর রস, খেজুর গুড়, দক্ষিণের দ্বার মাদারীপুর- স্লোগনাটি মুখে মুখে থাকলেও গেল কয়েক বছরে হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ। ফলে আগের মতো রস না থাকায় চড়া দামেই বিক্রি হয় রস ও গুড়। অন্যদিকে গাছ কমে যাওয়ায় হ্রাস পেয়েছে গাছির সংখ্যাও। ফলে অনেকেই আর এ পেশার সঙ্গে থাকছে না।

গেল এক দশককে অন্তত চার শ গাছি কমেছে মাদারীপুরে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আসায় চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। তবে মাদারীপুরের গুড়ের ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্যই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

মাদারীপুর পৌর শহরের মিলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নূরুল ইসলাম ঘরামী। ৩০ বছর ধরে খেজুরগাছ কাটেন। আগে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই শ গাছ কাটতেন। বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০টিতে। প্রচুর পরিশ্রম আর রস কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে দু-এক বছরের মধ্যে পেশায় ইতি টানবেন। আগামী প্রজন্মকেও এ পেশায় আনবেন না তিনি। আক্ষেপ একটাই, ইটভাটা গিলে খাচ্ছে খেজুরগাছ। সেই সঙ্গে লাগানো হচ্ছে না খেজুরগাছ।

নূরুল ইসলাম ঘরামী বলেন, ‘আগে তিন শর ওপরে গাছ কাটতাম। কিন্তু এখন সে রকম পাই না। গাছের সংখ্যা কমে গেছে অনেক। আর যাও কাটি, তাতে আগের মতো রস পড়ে না। যে কারণে শ্রমের মূল্য পাই না। ফলে আগের মতো আর এই পেশায় কাউকে আনতে চাই না। আমার ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। সে এই পেশায় আসবে না। যে কারণে আমিও কোনো রকমে টিকে আছি।’

প্রায় একই আক্ষেপ করলেন আরেক বৃদ্ধ আমজেদ আলীও। তিনি বলেন, ‘গাছ কাটতে যে পরিমাণ শ্রম ব্যয় হয়, তাতে সেই পরিমাণে টাকা-পয়সা পাই না। যে কারণে কয়েকটা গাছ কাটি, তাও আবার মাঝে মাঝে রস চুরি হয়। একটা বদলার দাম পড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আগে রসের দাম কম থাকলেও রস বেশি পেতাম। এখন এসব শুধুই স্মৃতি ছাড়া কিছু না।’

মাদারীপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গেল ১১ বছর আগে মাদারীপুর জেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৮৪ হাজার ৯৮৫ টি খেজুরগাছ ছিল। গাছির সংখ্যা ছিল ৫১৫ জন। বর্তমানে সেখানে ৪৪ হেক্টর জমিতে ৪৫ হাজার খেজুরগাছ রয়েছে। গাছি রয়েছে মাত্র ২৫০ জন। ফলে কৃষকদের খেজুরগাছ চাষের আহ্বান কৃষি কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের।

তিনি জানান, ‘গাছিদের প্রণোদনা দিতে গাছ কাটার নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনেক গাছিকে গাছ কাটতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীও দেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণেই আগের মতো আর গাছি পাওয়া যায় না। যারাও আছে, তাদের ঠিকমতো মজুরি পায় না। আমরা জেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে গাছিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করব। ভবিষ্যতে যাতে খেজুরগাছ ও গাছির সংখ্যা বাড়ে, সে বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা নেয়া হবে।’

খেজুরগাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে খেজুরগাছ ব্যবহারকে। এ ছাড়া মেহগনি ও রেইন ট্রির জন্য গাছে রস না হয়ে অল্পদিনেই মরে যায়। তাই সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে গাছিদের সহযোগিতার দাবি এলাকাবাসীর।

কুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা বদিয়ার হাওলাদার বলেন, ‘আগে শীতের সকালে আমারে ৮টা খেজুরগাছে অন্তত ৫ হাঁড়ি রস পেত। এখন সেখানে একটাও নেই। যে কারণে রসের যে স্বাদ, সেটা আমি ও আমার পরিবারের কেউ পাই না। সেই শীতের সকালের আমেজ আর নাই। এখন যাও আছে, আগামী দিনে তাও থাকবে না। খেজুরগাছ ইটভাটায় নিয়ে শেষ করে দিচ্ছে।’

কৃষকদের খেজুরগাছের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে গাছিদের প্রণোদনা দেয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের। তিনি বলেন, ‘গাছিরা যাতে রস নিচের থেকে সংগ্রহ করতে পারে, সে বিষয় আমরা কর্মশালা করেছি। অনেক গাছিকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। আশা রাখি, আগামী দিনে আরো গাছির সংখ্যা বাড়বে।

তিনি ভেজাল গুড় তৈরিকারকদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যারা চিনি ও ভেজাল দিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করবেন, তাদের বিষয় আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতেও আরও বাড়ানো হবে।’

মাদারীপুর জেলায় ব্র্যান্ডিং হিসেবে খেজুরের রস থেকে তৈরি পাটালি গুড়কে চিহ্নিত করছে প্রশাসন। তাই এই ঐতিহ্য রক্ষায় আরও বেশি আইনের প্রয়োগ ও গাছিদের উদ্ধুদ্ধ করার দাবি এলাকাবাসীর।

এ বিভাগের আরো খবর