লক্ষ্মীপুরে ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শ্রমিক-চালকসহ সাধারণ মানুষ। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় লক্ষ্মীপুর, ভোলার মজুচৌধুরীহাট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ট্রাক পার্কিং করা হচ্ছে। এতে করে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি ট্রাক লক্ষ্মীপুর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করে। এক যুগের বেশি পুরাতন একটি ছোট বাস টার্মিনাল থাকলেও ট্রাকের জন্য আলাদা কোনো টার্মিনাল নেই। এতে বাধ্য হয়ে মালবাহী বা খালি ট্রাক গাদাগাদি করে বিভিন্ন সড়কের ওপর এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। রাস্তার ওপরে ট্রাক রাখতে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে পথচারীসহ বিভিন্ন জনের মধ্যে হচ্ছে বাগবিতণ্ডা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার ওপর ট্রাক রাখায় শহরে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকতে হচ্ছে তাদের।
কবে নাগাদ টার্মিনাল নির্মাণ হবে সেটাও নিশ্চিত নয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিক, চালক ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সড়কে ট্রাক পার্কিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৫ জনের। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।
এর মধ্যে রাস্তায় পার্কিং করতে গিয়ে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা হয়েছে বলে দাবি হাইওয়ে পুলিশের।
লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমোহনী এলাকার গেটওয়াল সিরামিকের ডিলার মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, টার্মিনাল না থাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে ট্রাক পার্কিং করা হচ্ছে। এতে ট্রাক মালিক ও চালকদের সঙ্গে অনেক সময় হাতাহাতি ও তর্কতে জড়াতে হচ্ছে। দ্রুত ট্রাক টার্মিনাল তৈরি করার দাবি জানান তিনি।
একই অভিযোগ করেছেন জেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক টার্মিনালের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এসব বিষয়ে বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
পৌরসভাকে কর দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন ট্রাকচালক আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘টার্মিনাল না থাকায় চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চালকদের গোসলখানা ও শৌচাগার নেই। গাড়ি ধোয়ার জায়গা নেই, নেই ঘুমানোর ব্যবস্থা। গাড়ি রেখে কোথাও যাওয়া যায় না। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। অথচ আমরা পৌরসভাকে কর দিয়ে যাচ্ছি।’
লক্ষ্মীপুর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, ছোট-বড় মিলে প্রায়ই ৫ হাজার ট্রাক চলাচল করছে। অথচ একটি টার্মিনাল নেই। অনেক সময় ট্রাক পার্কিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। দ্রুত ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ হলে যানজট কমার পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রতিরোধও সম্ভব।
লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দর মাসুম ভূইয়া বলেন, ‘আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি পৌর মডেল ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পৌর শহরের মিয়ার রাস্তার মাথা এলাকায় ৬০ শতক জমি নেয়া হয়েছে। অর্থসংকটের কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারছে না পৌরসভা। তবে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।