বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তার পক্ষে রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করেন সাদ মো. আব্দুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি।
এদিকে,পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার দুদিন পর রোববার আবদুস সাত্তারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এমপি পদে মনোনয়নের জন্য ফরম সংগ্রহ করলেও নির্বাচন করবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সদ্য সাবেক এই এমপির ছেলে মাঈনুল হাসান তুষার।
তুষার বলেন, ‘বাবার পক্ষে আমাদের এক আত্মীয় ফরমটি সংগ্রহ করেছেন। তবে এখনও আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার বাকি আছে।
‘ফরম জমা দেয়ার নির্ধারিত তারিখ ৫ জানুয়ারির আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না। বাবা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবদুস সাত্তার। আর দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ১১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে আব্দুস সাত্তার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘সেই কোন আমল থেকে বিএনপি করি আমি। প্রতিষ্ঠাকাল...। এখন বয়স হয়েছে। আগের মতো তেজ নেই, গতি নেই। সব মিলিয়ে...।
‘আর দলেও এখন আমাদের গুরুত্ব নেই। কোনো কিছুতেই কোনো মতামত জানতে চায় না। ধরুন, এই কমিটি ওই কমিটি দেয়। পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। ভীষণ খারাপ লাগে। বিএনপির হয়তো আমাকে আর প্রয়োজন নেই। এমনটাই মনে হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
১ ফেব্রুয়ারি তার ছেড়ে দেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচন হবে। গুঞ্জন রয়েছে, ওই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে তিনি নিজে বা তার ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া প্রার্থী হচ্ছেন।
১৯৭৯ সালে প্রথম তৎকালীন কুমিল্লা-১ (নাসিরনগর ও সরাইলের একাংশ) ও বর্তমানের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। ওই সময়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে ও ১৯৯৬ সালের দুটি সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে আসনটি ছেড়ে দেন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। ওই সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে তাঁকে টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হন।
আবদুস সাত্তারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার দুদিন পর রোববার উকিল আব্দুস সাত্তারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রোববার রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তারকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছে।
১১ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির যে সাতজন সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন তাদের মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া অন্যতম। তবে সংসদ থেকে পদত্যাগের দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি ক্ষুব্ধ হন।