জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে দেবর জি এম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনার মধ্যে এক মঞ্চে বেগম রওশন এরশাদ। জানালেন অভিমান ভুলে দলের স্বার্থে এক হওয়ার আহ্বান। বললেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী আর তাতে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি।
রোববার জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও। তবে তিনি ওই সমাবেশে বক্তব্য দেননি।
জাতীয় পার্টিতে রওশনের সঙ্গে জি এম কাদের অনুসারীদের প্রকাশ্য বিরোধের শুরু হয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর। সেদিন দলের কাউন্সিল আহ্বান করে চিঠি দেন রওশন। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় সরব হয়ে ওঠেন কাদেরপন্থিরা। তারা বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে রওশন এই কাউন্সিল আহ্বান করতে পারেন না।
এর মধ্যে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে সে পদে বসাতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকেও চিঠি দেয় জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। দাবি পূরণ না হলে আর সংসদে না যাওয়ার হুমকিও আসে।
ওদিকে বহিষ্কার করা হতে থাকে রওশনপন্থিদের। দল আবার দুই টুকরো হয়ে যায় কি না, এই আলোচনার মধ্যে হঠাৎ শান্তির আভাস। রওশন অনুসারী মসিউর রহমান রাঙ্গা জানান, তিনি দ্বন্দ্বের মীমাংসায় বসতে আগ্রহী।
চিকিৎসা শেষে গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফিরে রওশন জাতীয় পার্টিতে ঐক্যের ডাক দেন। পাশাপাশি জি এম কাদেরের সঙ্গে বসেন চা চক্রে। দুইজন মিলে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও।
সমাবেশে রওশন এরশাদ বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে চলার পথে ছোটখাটো মান অভিমান সৃষ্টি হতেই পারে। নিজেদের মধ্যে মান অভিমান ভুলে যেতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে পার্টি শক্তিশালী থাকবে। মনে রাখতে হবে জাতীয় পার্টি একটি পরিবার। আমরা সকলেই জাতীয় পার্টি পরিবারের গর্বিত সদস্য।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে জানিয়ে এরশাদপত্নী বলেন, ‘সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে।’
আগামী নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার অনুরোধ করে রওশন বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। স্বজনপ্রীতি পরিহার করে সকল পর্যায়ের কমিটি গঠনে যোগ্যতার মাপকাঠি বজায় রাখতে হবে।’
মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য, জনপ্রিয় এবং ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে জানিয়ে রওশন বলেন, ‘দুঃসময়ে যাদের ব্যাপক ত্যাগ ও শ্রম ছিল, তাদের দলীয় বিভিন্ন পদে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।’
দলের আগামী কাউন্সিলে এই বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের একত্রে বসে আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দলীয় কর্মীদের মনোভাবকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই নিজেদের মধ্যে মান অভিমান অনেকটাই কমে যাবে। একইভাবে দলও সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।’
রওশন বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সব সময় গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, কখনও ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল না। ভবিষ্যতেও ধ্বংসাত্মক এবং অপরাজনীতিতে জড়াবে না।
‘জাতীয় পার্টি শান্তিতে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের সুআচরণ, ভালোবাসা এবং গঠনমূলক রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের মন জয় করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হব, ইনশা আল্লাহ।’
অসুস্থ থাকার সময় খোঁজখবর নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান রওশন এরশাদ। বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগতভাবে শতব্যস্ততার মাঝেও আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি আরও কৃতজ্ঞ আমার ছেলে সাদ এরশাদ এমপি ও তার স্ত্রীর প্রতি। তারা দীর্ঘ সময় আমার পাশে থেকে নিয়মিত দেখাশোনা ও সেবা-শুশ্রূষা করেছে।’