বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বই পায়নি সব শিক্ষার্থী, কোথাও কোথাও নেই উদযাপনও

  •    
  • ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৭:২৭

বই না পৌঁছানোয় শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও আয়োজন ছিল, তবে ছিল না জৌলুস ভাব।

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন রাজধানীসহ সারা দেশে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই ওঠেনি। কেউ কেউ পেয়েছে দু-একটি বই। আবার কয়েক প্রতিষ্ঠানে আয়োজন হয়নি উৎসব উদযাপনেরও।

আগের দিন শনিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। আর রোববার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক দিবস-২০২৩-এর শুরু করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জাকির হোসেন।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিকের বই উৎসব শুরু হয়। অন্যদিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু হয় মাধ্যমিকের বই উৎসব। আয়োজনে গাজীপুরে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন গণশিক্ষা মন্ত্রী।

বই উৎসব শুরুর পর রাজধানী ও এর আশপাশের বিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বই না পৌঁছানোয় শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও আয়োজন ছিল, তবে ছিল না জৌলুস ভাব।

রাজধানীর একটি স্কুলে বই উৎসবে বিতরণ করা হচ্ছে নতুন বই। ছবি: নিউজবাংলা

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে এক দিনে বা এক সঙ্গে বই না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিন বা সময়ে দেয়া হবে বিনামূল্যের বই। ফলে বই বিতরণের কাজটি চলবে আরও কয়েক দিন।

রোববার কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালন হচ্ছে, তাই স্কুলে সোমবার থেকে বই দেয়া হবে বলে জানিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে কবে সব বই দেয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি তারা।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল আটটা থেকেই ডেকে নেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। ১০টায় বই দেয়া হয়, শুধু একটি করে বই পেয়েছে তারা। বই দেয়ার পর ছবি তুলে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘সকাল থেকে বাচ্চা স্কুলে। এরপর একটিমাত্র বই দেয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ ফটোসেশান করে চলে যেতে বলা হয়। আমার মেয়ে ক্লাস সেভেনে উঠেছে। ওকে শুধু ইংরেজি গ্রামার বই দিয়েছে। বাকি বই কবে দেয়া হবে সেই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানা যায়নি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুননাহারের।

কয়েকটি স্কুলে ভিড় ছাড়াই আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে বই দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। তবে মেলেনি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সব বই। কোনো কোনো শ্রেণিতে দেয়া হয় একটি করে বই, আবার কোথাও দুটি।

নতুন বই হাতে রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা

বেশ কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনো সব শ্রেণির সব বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। এ জন্যই কোনো কোনো শ্রেণিতে সব বই দেয়া যায়নি। মূলত নিম্ন মাধ্যমিক স্তর ও প্রাথমিকে কয়েকটি শ্রেণিতেই এ সমস্যা হচ্ছে।

আজিমপুর সরকারি স্কুলে বই বিতরণ করা হলেও পাঠ্যক্রম অনুযায়ী দেয়া হয়নি সব বই। বিভিন্ন শ্রেণিতে একটি করে বা দুটি করে বই দেয়া হয়েছে।এ ছাড়া ইস্কাটন স্কুল ও ইস্পাহানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে রোববার বই উৎসব করা হয়নি। প্রতিষ্ঠান দুইটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসব করা হচ্ছে ঢাকা ও গাজীপুরে। সোমবার এ স্কুলে বড় আকারে আয়োজন করা হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবার পাঠ্যপুস্তক দিবস-২০২৩ উদযাপনের আয়োজন করে। এ বছর বই উৎসবে সারা দেশে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ শিক্ষার্থীকে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ শিক্ষার্থীকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হবে। এনসিটিবি বলছে, এর মধ্যে প্রাথমিকের জন্য ৬ কোটি ৬৬ লাখ ১৯৫টি বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে মুদ্রণ সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮২ হাজার বই প্রস্তুত হয়েছে।

অন্যদিকে, এনসিটিবির পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার বই প্রস্তুত থাকার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সংখ্যা ১৪ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার।

মুদ্রণ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ৮০ শতাংশের মতো বই সরবরাহ করা যেতে পারে ১ জানুয়ারির মধ্যে। একই সময়ের মধ্যে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় এবং নিম্ন মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় যাবে। এতে সরবরাহের হার দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশের মতো।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সারা দেশে ৮০ ভাগ বই সরবারাহ করা হয়েছে। জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে সব শিক্ষার্থী পাঠ্যক্রম অনুযায়ী হাতে পাবে সব বই।

পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেরিতে চুক্তি হওয়া, মাধ্যমিকের কয়েক শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রেও দেরিতে চুক্তি করা, কাগজ সংকট, পাল্প সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পাঠ্যবই ছাপা বাদ দিয়ে নোট-গাইড ছাপানো ইত্যাদি কারণে বই ছাপতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে এনসিটিবি ও মুদ্রণ সমিতি জানিয়েছে, কাগজ সংকটের কারণে সব বই সময়মত ছাপানো যায়নি। একই কারণে পাওয়া যায়নি ৮৫ জিএসএম মানের উজ্জ্বলতা। যার ফলে বই ছাপাতে হয়েছে নিম্নমানের নিউজপ্রিন্ট কাগজে। অনেক প্রিন্টার্স বই ছাপানোর দরপত্র নিলেও সময়মত ছাপাতে পারেনি বই।

২০১০ সাল থেকে এই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাক ৮০ হাজার ২১১ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর