বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দলীয় সাবেক এমপি আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সমাবেশে ঘোষণা দিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয় জানিয়ে পদত্যাগ করার পর এবার দলীয় পদও ছাড়লেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে আব্দুস সাত্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেই কোন আমল থেকে বিএনপি করি আমি। প্রতিষ্ঠাকাল...। এখন বয়স হয়েছে। আগের মতো তেজ নেই, গতি নেই। সব মিলিয়ে...।
‘আর দলেও এখন আমাদের গুরুত্ব নেই। কোনো কিছুতেই কোনো মতামত জানতে চায় না। ধরুন, এই কমিটি ওই কমিটি দেয়। পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। ভীষণ খারাপ লাগে। বিএনপির হয়তো আমাকে আর প্রয়োজন নেই। এমনটাই মনে হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। ১১ ডিসেম্বর বিএনপির অন্য ছয় এমপির সঙ্গে তিনিও জাতীয় সংসদে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ১ ফেব্রুয়ারি তার ছেড়ে দেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচন হবে।
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘দল যা বলবে তা-ই করতে হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত দূরদর্শী নয়। আমাদের সঙ্গে আগে আলোচনা করা হলে ভালো পরামর্শ দিতে পারতাম।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একবার টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
শোনা যাচ্ছে, ওই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে সাত্তার ভূঁইয়া নিজে অথবা তার ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া প্রার্থী হতে পারেন।
এর আগে ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসনগুলো উন্মুক্ত রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। এমনও হতে পারে বিএনপির তৃণমূলের নেতারাও নির্বাচন করতে আসবেন। ফলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী ওই সময় হাসতে হাসতে বলেন, ‘এমনও হতে পারে, যে দলের নেতারা পদত্যাগ করেছেন সে দলের নেতারাই আবার নির্বাচন করলেন!’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘কত কথাই তো রটবে। আপাতত এসব নিয়ে চিন্তা করছি না।'
১৯৭৯ সালে প্রথম তৎকালীন কুমিল্লা-১ (নাসিরনগর ও সরাইলের একাংশ) ও বর্তমানের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। ওই সময়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে ও ১৯৯৬ সালের দুটি সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে আসনটি ছেড়ে দেন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। ওই সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে তাঁকে টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হন।