বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খন্দকার মাহবুব হোসেনের প্রয়াণ

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ২৩:০৫

আইনজীবী মাসুদ রানা জানান, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে রাত পৌনে ১১টায় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে রাত পৌনে ১১টায় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার জুনিয়র আইনজীবী মাসুদ রানা।

শুক্রবার তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।

তার জুনিয়র আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলাল সকালে বলেন, ‘খন্দকার মাহবুব হোসেন স্যারের অবস্থার অবনতি হলে গতকাল (শুক্রবার) লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল।’

এর আগে গত বুধবার এ আইনজীবী বলেন, ‘হঠাৎ স্যারের ফুসফুসে পানি আসায় সোমবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেয়া হয়।’

অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ। তার পৈত্রিক বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায়। তিনি ১৯৬৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৭৩ সালে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জন্যে গঠিত আদালতের প্রধান কৌঁসুলী ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত।

খন্দকার মাহবুব হোসেন ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৬ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ পান।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ওই আসন থেকে এর আগেও অন্য দল থেকে একাধিক বার তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন প্রধান বিচারপতি।

সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুতে আইন অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।

অ্যাটর্নি জেনারেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হলো। এ শূন্যতা কবে পূরণ হবে জানি না। আমি তার আত্মা মাগফিরাত কামনা করছি।’

খন্দকার মাহবুবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তার সহকর্মী জেড আই খান পান্না।

তিনি বলেন, ‘খন্দকার মাহবুব একজন অনুকরণীয় আইনজীবী ছিলেন। তার চলাফেরা, কথা বার্তা, বাচন ভঙ্গি ছিল অনুকরণীয়।তার জ্ঞানের গভীরতা অপরীসিম। আইন অঙ্গনে তিনি ছিলেন আমাদের সর্বশেষ নক্ষত্র।’

খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন একজন দেশ শ্রেষ্ঠ ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া আইন অঙ্গনে তার রয়েছে বর্ণাঢ্য জীবন।

১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ বরগুনার বামনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন।

১৯৫৮ সালে খন্দকার মাহবুব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যাসোসিয়েশনের ভিপি নির্বাচিত হন। তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করায় কয়েকজন সহযোগীসহ তিনি গ্রেপ্তার হন।

সামরিক আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি নিজেই নিজের মামলা পরিচালনা করেন এবং মামলা থেকে অব্যাহতি লাভ করেন। তবে সামরিক শাসক তাকে এমএ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি। ১৯৬৪ সালে আইন পাস করে তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নেপথ্যে থেকে খন্দকার মাহবুব সহায়তা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

১৯৬৭ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি আপীল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে তিনি নিয়োগ পান।

১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে চারবার (২০১০-২০১১, ২০১১-২০১২, ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-২০১৬ সাল) নির্বাচিত হন।

এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইবার (২০০৭-২০০৮ ও ২০১২-২০১৫ সাল) দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেছেন অধ্যাপিকা ফারহাত হোসেনকে। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর