নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার এক অদ্বিতীয় সুযোগ করে দিয়েছে সাগরকন্যা। তাই বছরের শেষ দিনকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণে গত কয়েক দিনে হাজার-হাজার পর্যটক ভিড় জমিয়েছেন।
স্বজনদের নিয়ে বেড়াতে এসে সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন দর্শনীয় সব স্থান। এদিকে পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন।
খুলনা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে আসা নিশাদ তালুকদার বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময় ছুটি একটা তেমন পাই না। তাই বছর শেষে এসেছি থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে। আগামীকাল নতুন সূর্যোদয় দেখে আবার ব্যাক করব।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর নিবাসী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি। গত বছর ঠিক এমন সময় ছিলাম কক্সবাজার। এবার পদ্মা সেতু হয়েছে, তাই বাচ্চারা বলল পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটায় আসবে। বাচ্চাদের আবদার মেটাতেই এসেছি। বেশ ভালো লাগছে। বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাচ্চারা বালুর ওপর বসে ছিল। তবে কুয়াশার জন্য সূর্য পরিষ্কারভাবে দেখতে পারিনি। কাল ভোরে যাব গঙ্গামতীর দিকে সূর্যোদয় দেখতে।’
বিকেলে কথা হয় সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে আসা ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সূর্যাস্তের চমৎকার দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মনে হচ্ছে পানির মধ্যে লাল কী যেন গলে যাচ্ছে। তবে কুয়াশা না থাকলে আরো ভালো লাগত।’
শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার বলেন, ‘আমার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাই পরিবারের সবার সঙ্গে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে এসেছি। বছরের শেষ সূর্যাস্ত এবং বছর শুরুর সূর্যোদয় দেখে কুয়াকাটা থেকে বাড়ি ফিরব।’
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা দিনভর সৈকতের পূর্ব প্রান্তে লাল কাঁকড়া ও সাদা শামুক দেখে বেড়িয়েছেন। অনেকে গেছেন ফাতরার বন, লেম্বুর চর, গঙ্গামতী আর ঝাউ বাগানের বিশাল বনাঞ্চলে। ২০০ বছরের পুরোনো সাম্পান নৌকা, মিশ্রিপাড়ার রাখাইন পল্লি, চরবিজয় নামের নতুন জেগে ওঠা চর ছিল বাড়তি আকর্ষণ।
এদিকে পদ্মা সেতুর বদৌলতে এবার শীত মৌসুমে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা অন্যবারের চেয়ে বেশি। করোনা মহামারির লোকসান কাটিয়ে লাভের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘শীতকে পর্যটক মৌসুম হিসেবেই ধরি। তবে এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ পদ্মা আর পায়রা সেতুর সুবাদে অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি পর্যটকের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি। আশা করি, সারা বছরই এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজন পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তৎপর আছে। বাড়তি নিরাপত্তাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’
থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন এবং নতুন বছর বরণে যাতে পর্যটকরা কোনো সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য বাড়তি টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও কাজ করছেন বলে জানান তিনি।