বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তত্ত্বাবধায়ক দাবিতে বিএনপির পৌনে তিন ঘণ্টার মিছিল

  •    
  • ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:২৩

নয়াপল্টন থেকে মগবাজার গিয়ে শেষ হয় মিছিলটি। মিছিল শুরুর হওয়ার ৪০ মিনিট পর সেখানে পৌঁছে নেতা-কর্মীদের ঝামেলা না করে বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেন অগ্রভাগে থাকা আমানউল্লাহ আমান। এরপর মিছিলের শেষ প্রান্ত সেখানে যেতে সময় লাগে আরও দুই ঘণ্টা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনসহ ১০ দাবিতে রাজধানীতে বিএনপির মিছিলটি শুরু হওয়ার পর শেষ হতে হতে লেগে গেল প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা।

বেলা সাড়ে তিনটায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটির সামনের অংশ মগবাজার পৌছে ৪ টা ১০ মিনিটে। সেখানে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ঝামেলা না করে নেতা-কর্মীদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

তার এই নির্দেশের পর মিছিলের বাকি অংশ মগবাজার আসতে গেল আরও দুই ঘণ্টা। সন্ধ্যা ৬ টা ১০ মিনিটে সব নেতা-কর্মী আসার পর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সেখানে রাখেন বক্তব্য।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বিএনপির কর্মী সমর্থকরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নয়াপল্টনে আসতে থাকেন। হলুদ, লাল, বেগুনিসহ নানান সব রংর ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জাকজমকপূর্ণ ভাবে আসেন তারা। ঢাকা ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকেও আসেন তারা।

বিকাল তিনটার দিকে নয়াপল্টনে গাড়িতে তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতারা। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঘোষণা করেন পরবর্তী কর্মসূচি। জানান, ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী ১১ জানুয়ারি সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

সেই সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমি বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করছি। আমরা আশা করছি এই দেশের জনগণ গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই সরকারকে বিদায় জানাবে।’

বিএনপির মিছিল শুরুর ঘোষণা দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগামী ১১ জানুয়ারি সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন

আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন এই দেশে হবে না, করতে দেয়া হবে না। এই ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’

এরপর শুরু হয় মিছিল। বিএনপির সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনকে মিছিলের অংশ নিতে স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি সংগঠন তাদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেয়।

নয়াপল্টন থেকে মিছিলটি যাত্রা শুরু করে নির্ধারিত রুট কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক দিয়ে মগবাজারে।

মিছিলের শেষ প্রান্তে ছিল শ্রমিক দল ঢাকা দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা। তারা মগবাজার মোড় অতিক্রম করার পর সেখানে বক্তব্য রাখেন গয়েশ্বর চন্দ্র।

তিনি বলেন, ‘আজকে ৩০ তারিখ আমাদের মনে পড়ে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগের দিন রাত্রে ভোট ডাকাতি করে, জনগণের ভোট চুরি করে যিনি সরকার গঠন করেছেন, তার নাম শেখ হাসিনা। এই ভোট ডাকাতি যারা করেছে তাদেরকে আপনারা চেনেন, আমরাও চিনি।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে এক দফা...আসলে এই ১০ দফা-ই এক দফা। শেখ হাসিনার পদত্যাগ..নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করার লক্ষ্যে।’

বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে আজকে ঘোষিত কর্মসূচি যা সিনিয়র নেতা মোশারফ হোসেন বলেছেন, সেই ১১ তারিখের জন্য প্রস্তুত থাকবেন। রাজপথে যেহেতু নেমেছেন। রাজপথ থেকে খালি হাতে ফেরত যাবেন না।’

বিএনপির মিছিলে অংশ নিতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া নেতা-কর্মীদের একাংশ

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা জনগণের ভাষা বুঝুন। মানুষের চোখের দিকে তাকান। পুলিশ দিয়ে টিয়ারগ্যাস আর গুলি করে মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ আপনার আর নাই।’

পুলিশ সদস্যদেরকেও সতর্ক করে দেন গয়েশ্বর। বলেন, ‘যারা নাকি জনগণের নিরাপত্তার জন্য জনগণের টাকায় সরকারি পোশাক পড়েন তাদের বলব, আজকের মিছিল আপনাদের নাকের ডগায় দাঁড়িয়েছে। তাদের চোখের মুখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করেন। জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না।

‘জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই জনগণ জীবন দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। এবং এই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াবে তারা আগামীতে জনগণের গণদুষমনের তালিকায় নাম লিখাবে।’

মিছিলের মূল ট্রাকে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

কর্মসূচির সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন।

বিএনপির পাশাপাশি তার ভেঙে দেয়া ২০ দলীয় জোটের ১২ শরিকের জোট ১২ দলও বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

একই কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা নেয়া গণতন্ত্র মঞ্চও। তবে ঘোষণা দিয়েও বায়তুল মোকাররমে আসেনি জামায়াত। দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির মিছিলের রুট শান্তিনগর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সেখান থেকে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে আহত দুই জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

বিএনপির মিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও এদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। তারা বায়তুল মোকাররমে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়ে শান্তিনগরে মিছিল বের করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়

সংঘর্ষে পুলিশের ১০ জন সদস্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তাদেরকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুই জন ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার।

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় দলটির বিভাগীয় সমাবেশে এই মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেদিন তারিখ ঠিক করা হয় ২৪ ডিসেম্বর। সেদিন সারা দেশে কর্মসূচি পালিত হলেও ঢাকারটা স্থগিত করা হয়।

একই দিন রাজধানীতে ছিল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। সেদিন সারা দেশ থেকে আসে নেতা-কর্মীরা। এই দিন ঢাকায় মিছিলের ডাক দেয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্ষমতাসীন দল। এরপর বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে দেয় ছয় দিন।

বিএনপির পর কর্মসূচি পেছায় তাদের সমমনা দলগুলোও।

এই মিছিলের রুটে পুলিশের অবস্থান চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে কাকরাইল মোড়ে দুপুরের পর হঠাৎ করে জলকামান ও সাঁজোয়া গাড়ির উপস্থিতি নিয়ে দেখা দেয় উত্তেজনা। তবে কোনো গোলযোগ ঘটেনি।

এ বিভাগের আরো খবর