বাংলাদেশে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জামানত হারানোর যুগেও প্রবেশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিএনপির ঘোষণা করা ১০ দফা দাবির পক্ষে শুক্রবার মিছিল করে গণসংহতি আন্দোলনসহ সাত সংগঠনের জোট গণতন্ত্র মঞ্চও।
নয়াপল্টন থেকে দুপুর ২টায় বিএনপির মিছিল শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয় সাকিদের এই মিছিল। দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে এই মিছিলটি শুরু হয়ে শেষ হয় কাকড়াইল মোড়ে।
মিছিলের আগের সমাবেশে গত মঙ্গলবার রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেয়ে জামানত হারানোর বিষয়টি তুলে ধরেন সাকি। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পতনের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। গত দুই দিনে বাংলাদেশে দুটি ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে মেট্রোরেলের যুগেও প্রবেশ করেছে, একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ জামানত হারানোর যুগে প্রবেশ করেছে।
‘যারা দেশ ধ্বংস করতে চায়, এরা নাগরিকের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। বাংলাদেশের নাগরিকরা এটা হতে দেবে না। সেই জন্য আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ আওয়াজ তুলেছি।’
রংপুরে টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়া জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮। সবাইকে চমকে দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল। তিনি পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট, হয়েছেন চতুর্থ।
জাতীয় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে এই পরাজয় ক্ষমতাসীন দলের কাছে বড় আঘাতের মতো। তবে এত বড় পরাজয়ের কারণ দলের অনৈক্য। সেখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে হয়েছে তৃতীয়। মিলনও যে ভোট পেয়েছেন, সেটিও ক্ষমতাসীন দলের বাক্সেই। ফলে সেখানে দলের একক প্রার্থী হলে ক্ষমতাসীন দলকে এতটা বেকায়দায় পড়তে হতো না। বাক্সে পড়তে পারত ৫৬ হাজারেরও বেশি। তখন গতবারের মতোই দ্বিতীয় হতে পারত আওয়ামী লীগ।
২০১৭ সালেও ঝন্টু এক লাখ ভোটে হারিয়েই মেয়র হয়েছিলেন মোস্তফা। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬২ হাজার চার শ ভোট। এবার আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী মিলিয়ে পেলেন ৫৬ হাজারের কিছু বেশি। অবশ্য মোস্তফার ভোটও কমেছে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসন আর গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তারা ব্যালট বাক্স ভরেছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চলে, কিন্তু সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাষ্ট্রকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক ঘটনা আর কখনও ঘটেনি।’
সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু তাদের পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেন। জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বন্দি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক স্বপন উদ্দীন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার ও গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানও বক্তব্য দেন।