বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম জাকির উদ্দিন মিন্টু জয়পুরহাট থেকে রাজধানী ঢাকায় এসেছেন বহুল প্রত্যাশিত দেশের প্রথম মেট্রোরেলে চড়তে।
আগারগাঁও স্টেশনে এসে দ্বিতীয় তলায় সুসজ্জিত ঝকমকে প্ল্যাটফর্মে উঠেই আনন্দাশ্রু ফেলেন ৭২ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে এমন একটি স্বাধীন দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আজকে দেশকে এমন একটি সুউচ্চ জায়গায় নিয়ে যাবেন শেখ হাসিনা, এটা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।’
মেট্রোরেল আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক বলেও উল্লেখ করেন।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের এক দিন আগে মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভাড়া ছাড়াই মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
জনসাধারণের জন্য বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা মেট্রোরেল খুলে দেয়ার দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
উত্তরা উত্তর স্টেশনে ভোর ৬টা থেকেই দীর্ঘ লাইন শুরু হয়।
উত্তরার উত্তর স্টেশনে প্রবেশ গেটে লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়েছেন গাউসুল আজম। তিনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) এসে ফিরে গিয়েছি। এ জন্য আজকে ভোর সাড়ে ৫টায় এসে লাইনের প্রথমেই দাঁড়িয়েছি। আজকে গেট ওপেনের প্রথমেই প্রবেশ করতে পেরে ভীষণ খুশি।’
সেই সঙ্গে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে এই সারি।
সাধারণ মানুষের জন্য মেট্রোরেল খুলে দেয়ার প্রথম দিনে যাতায়াত করেছেন ৩ হাজার ৮৫৭ যাত্রী। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও রুটে চলেছে ১০টি ট্রেন।
দিয়াবাড়ী থেকে সকাল ৮টায় যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ীর উদ্দেশে প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এই রুটে মেট্রোরেল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ডেপুটি সেক্রেটারি (জনসংযোগ) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে চলাচল করার প্রথম দিনে মেট্রোরেলে সিঙ্গেল জার্নি ও এমআরটি পাস নিয়ে ভ্রমণ করেছেন ৩ হাজার ৮৫৫ জন।
‘এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৫৬ জন সিঙ্গেল জার্নির টিকিট কিনেছেন। এ থেকে আয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৬০ টাকা। আর এমআরটি পাস কেনেন ৯৯ জন, যেখান থেকে আয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৬০ টাকা।’
এর আগে বুধবার বেলা ১১টা ৪ মিনিটে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী প্রান্তে উদ্বোধনস্থলে তিনি এই ফলক উন্মোচন করেন। ওই সময় সরকারপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বক্তব্যের পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে সফরসঙ্গীদের নিয়ে মেট্রোরেলে চড়েন শেখ হাসিনা।