বাংলাদেশে মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি বলে বিরোধী পক্ষ থেকে যে সমালোচনা এসেছে, তাকে নাচক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি দাবি করেছেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের ট্রেনের পার্থক্য আছে। তিনি টেনেছেন রিকশা ভাড়ার প্রসঙ্গও।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন শুরুর দিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। এ সময় অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি মন্ত্রী প্রশ্নের মুখে পড়েন ভাড়া নিয়েও।
মন্ত্রী ভাড়ার প্রসঙ্গে উদাহরণ টানেন ঢাকার রিকশা ভাড়ার। তিনি বলেন, ‘মানুষ রিকশায় চড়লে কমপক্ষে ২০ টাকা দিতে হয়। সে অর্থে মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি না, ঠিকই আছে।’
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে ১০০ টাকা। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা। মতিঝিল থেকেও মিরপুর ১০ পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা, মিরপুর-১১ পর্যন্ত ৭০ টাকা, পল্লবীতে ৮০ টাকা। আর কমলাপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া ঠিক হয়েছে ৩০ টাকা।
এতে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক হয়েছে ২০ টাকা। দুটি স্টেশনের পর প্রতি স্টেশন যেতে ভাড়া দিতে হবে বাড়তি ১০ টাকা।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, এই ভাড়া বেশি।
দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সেদিন তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আর কলকাতার চেয়ে তিন গুণ। এই ভাড়া ঢাকায় চলাচল করা বাসের চেয়ে দ্বিগুণ ও কলকাতা মেট্রোরেলের তিন গুণ।
‘জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ গণতান্ত্রিক সরকার হলে এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। এজন্য গণবিরোধী এই সরকারের পতন ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
বুধবার মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিনই কাদের কথা বলেন বিএনপির এই বক্তব্য নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এখন মেট্রোরেল নিয়ে কিছু বলতে পারছে না। দুর্নীতি নিয়ে কিছু বলতে পারে না। এখন বলছে ভাড়া বেশি।’
বিএনপির বক্তব্যের আরও সুনির্দিষ্ট জবাব দিয়ে পরদিন তিনি বলেন, ‘ঢাকা ও কলকাতার মেট্রোরেলের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের মেট্রোরেল থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে ভালো। ঢাকার মেট্রোরেল ভালো লাগছে।’
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটের কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলেও জানান মন্ত্রী। সরকার যে আরও পাঁচটি রুটে এই ট্রেন চালু করতে চাইছে, তার মধ্যে দুটি রুটের কাজও বর্তমান সরকারের বাকি মেয়াদেই শুরু হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
রুটি দুটি হলো এমআরটি-১ ও এমআরটি-৫।
প্রথম রুটটি উত্তরায় হযরত শাহজালাল (রঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত হয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক দিয়ে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর যাবে। কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পাশ পর্যন্তও বিস্তৃত থাকতে আরেকটি লাইন।
দ্বিতীয় রুটটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী হয়ে টেকনিক্যাল দিয়ে মিরপুর ১-মিরপুর ১০ ও মিরপুর ১৪ হয়ে কচুক্ষেত দিয়ে বনানী ও গুলশান নিয়ে নতুন বাজারের ভাটারা পর্যন্ত বিস্তৃত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই দুটি লাইন ৩১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে, যার মধ্যে ২১ কিলোমিটার হবে ভূগর্ভস্থ এবং ১০ কিলোমিটার হবে এক্সপ্রেসওয়ে।’
চট্টগ্রামে মেট্রোরেল সার্ভিস চালু করা যায় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তা জানতে চট্টগ্রামে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হচ্ছে।