ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশে ডাকাতির পরিকল্পনা সাজাতেন মো. হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছান। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ের কাজ গোছাতেন তার চক্রের সদস্যরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির ঠিক আগের দিন দেশে ফিরতেন হাছান। এরপর তার নেতৃত্বে চলত ডাকাতি।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর এলাকার আল-আমিন জুয়েলার্সে গত ১৭ আগস্ট দুপুরের দিকে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্যই পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ।
আল-আমিন জুয়েলার্সের ওই দোকান থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৯ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার লুট হয়। বোমা ফাটিয়ে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ডাকাতির ঘটনা ধরা পড়ে সিসিটিভি ফুটেজে। এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনার পাশাপাশি রাজধানীর খিলগাঁও থানার আরেকটি ডাকাতির ঘটনার ছায়াতদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে দুটি ঘটনাতেই নেতৃত্ব দিয়েছেন মো হাসান। তিনিসহ ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন মো. আরিফ, মো. আইনুল হক ওরফে ভোলা, মো. সাইফুল ইসলাম মন্টু, মো. আনসার আলী ও মো. শাহিন।
রাজধানীর রামপুরা থানার হাজীপাড়া বৌ-বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় একটি পিস্তল, দুটি গুলি, পাঁচটি চাপাতি ও একটি প্রাইভেট কার।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘খিলগাঁও থানার একটি ডাকাতি মামলা ছায়াতদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ জানাতে পারে, সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি করছে। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, ‘ডাকাত দলের হোতা মো. হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছান অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন। এরপর হাছান নির্দিষ্ট জুয়েলারি দোকান এলাকাকে টার্গেট করে বাসা ভাড়া নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিতেন।
‘ডাকাতির এক দিন আগে বাংলাদেশে এসে চক্রের অন্য সদস্যদের নিয়ে তিনি ডাকাতি করতেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা প্রথমে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ৫-৭ মিনিটের মধ্যে স্বর্ণালংকারের দোকানে ডাকাতি করতেন।’
এই দফায় কোথায় ডাকাতির পরিকল্পনা সাজিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি গ্রেপ্তার হলেন, সেই প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক কিছু তথ্য পেয়েছি। চক্রের সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।’
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, হাছান জমাদ্দার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যেতেন। এরপর সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন। পরে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশে অবস্থান করা সহযোগীদের পরিকল্পনা জানাতেন। ডাকাতি শেষে আবার সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ভারতে চলে যেতেন।
হাছানের বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।