বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নৌকার বিপর্যয়ে রংপুরে আসলে কত ভোট কমেছে আওয়ামী লীগের

  •    
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:০৫

আওয়ামী লীগের এই ভোট কমে যাওয়ার হিসাবটি এত সরল নয়। সেখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে হয়েছে তৃতীয়। মিলনও যে ভোট পেয়েছেন, সেটিও ক্ষমতাসীন দলের বাক্সেই। ফলে সেখানে দলের একক প্রার্থী হলে ক্ষমতাসীন দলকে এতটা বেকায়দায় পড়তে হতো না। বাক্সে পড়তে পারত ৫৬ হাজারেরও বেশি। তখন গতবারের মতোই দ্বিতীয় হতে পারত আওয়ামী লীগ।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশও না পেয়ে জামানত হারানোর ঘটনাটি দলের নেতা-কর্মীদেরই বিস্মিত করেছে। ক্ষমতাসীন দলের ভোট এতটা কমে গেলে কেন, সে নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা।

মঙ্গলবার দেশের সর্বউত্তরের এই মহানগরের ভোটে নৌকা নিয়ে ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। তিনি হয়েছেন চতুর্থ।

পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু ভোট পান ৬২ হাজার চার শ ভোট। অর্থাৎ নৌকার ভোট কমেছে ৪০ হাজার ৯৪টি।

তবে আওয়ামী লীগের এই ভোট কমে যাওয়ার হিসাবটি এত সরল নয়। সেখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে হয়েছে তৃতীয়। মিলনও যে ভোট পেয়েছেন, সেটিও ক্ষমতাসীন দলের বাক্সেই। ফলে সেখানে দলের একক প্রার্থী হলে ক্ষমতাসীন দলকে এতটা বেকায়দায় পড়তে হতো না। বাক্সে পড়তে পারত ৫৬ হাজারেরও বেশি। তখন গতবারের মতোই দ্বিতীয় হতে পারত আওয়ামী লীগ।

তবে দুই প্রার্থীর ভোট যোগ হলেও সেটি গতবারের প্রার্থী ঝণ্টুর চেয়ে কিছুটা কম।

টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়া জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফারও ভোট কিছুটা কমেছে। তিনি এবার চেয়েছেন পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে তার বাক্সে পড়ে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট।

অর্থাৎ মোস্তফার ভোট কমেছে ১৩ হাজার ৬৯১ টাকা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও নৌকায় পড়া ভোট হিসাব করলে তাদের ভোট কমেছে ৬ হাজারের কিছু বেশি।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ছিলেন রংপুর সিটির প্রথম মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা ঝণ্টুর ভাগনি জামাই। তিনি ছিলেন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন নৌকার প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন ভোট পেয়েছেন। ছবি: নিউজবাংলা

এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এক ডজন। দল ডালিয়াকে বেছে নেয়ার পর অন্যরা সরে গেলেও সরতে চাননি মিলন। দল থেকে বহিষ্কারেও টলেননি তিনি। দল ও ভোটারদের মধ্যে ডালিয়ার চেয়ে মিলনের প্রভাব যে বেশি, সেটির প্রমাণ হলো ভোটের হিসাবেই।

মামা শ্বশুর প্রয়াত ঝন্টুর পক্ষে কয়েকটি নির্বাচনে খেটেছেন মিলন। ফলে ভোটের অভিজ্ঞতা ছিল তার।

প্রচারে ডালিয়া ছিলেন নিস্প্রভ, সব ওয়ার্ডে ছিল না কার্যালয়ও

আলোচনায় না থাকলেও ডালিয়া মনোনয়ন পাওয়ার পর দলের নেতা-কর্মীদেরকে তার পক্ষে নামাতে পারেননি, এটি ভোটের আগেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। এমনকি ৩৩টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগেই ছিল না নির্বাচনি অফিস। ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ছিল নামমাত্র।

এমনকি দলের প্রথম সারির অনেক নেতাও জানতেন না ডালিয়া নির্বাচন করবেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর কেবল ১৭ দিনে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে গিয়ে প্রচারে যাওয়াও সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। পোস্টার, লিফলেটও দেখা যায়নি সেভাবে।

ডালিয়ার হয়ে কাজ করা নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি এত বিস্মিত হয়েছি যে, ফলাফলটা অত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছি না। এর ভাবনাটাও সহজভাবে ভাবতে পারছি না। ’

মহাগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি বলেন, ‘শুধু দলীয় মার্কা হলে হবে না। প্রার্থীর উপর ভোট নির্ভর করে। মার্কা অবশ্যই লাগবে, মার্কার সঙ্গে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, তার আচার-আচরণ, মানুষের সঙ্গে তার অতীত কর্মকাণ্ড কী কাজ করছেন না করছেন, এগুলো মানুষ মূল্যায়ন করে।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল দলীয় কোন্দল ও সমন্বয়ের অভাবের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভোটের মাঠে যুবলীগ ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবাই ছিল। মূলত সময় ছিল অল্প, এত কম সময়ে বিশাল এলাকায় যাওয়া কষ্টকর। সময় পেলে এমন হতো না।’

সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘ওদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। তৃণমূল পর্যন্ত ঠিকমতো প্রচার-প্রচারণা থাকাসহ হ্যাভিয়েট প্রার্থী ছিল না। এ কারণেই ভোটে মানুষ খুব একটা মূল্যায়ন করেনি।’

বিপুল ভোটে মেয়র হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ছবি: নিউজবাংলা

হেরে সাড়া দিচ্ছেন না কেউ

সার্বিক বিষয়ে জানতে হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নিজেও জিততে পারলেন না আবার জেদের কারণে দলের মার্কা নৌকার জামানত হারানোকে কীভাবে দেখছেন, সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল না লতিফুর রহমান মিলনের কাছ থেকেও। তিনি ফোন ধরেননি।

ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের নেপথ্যে কী

পাঁচ বছর আগের তুলনায় মোস্তফার ভোট কমেছে, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ভোট যোগ করলেও সেটি ২০১৭ সালের তুলনায় কম, এর ভিড়ে ভোট বেড়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালের।

২০১৭ সালের তিনি ভোট পান ২৪ হাজার ৬টি। এবার পেয়েছেন দ্বিগুণের বেশি।

পিয়ালের সাফল্যে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দলটির কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে অত্যান্ত মজবুত ও দৃঢ়।

তিনি বলেন, ‘দলটির নেতা কর্মীরা দলের আনুগত্য অনেক বেশি। তারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারনা খুব একটা না থাকলেও ঘরে ঘরে ভোট প্রার্থনা করেছেন তারা।’

আবার ২০১৭ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সেখানে ভোট পেয়েছিল ৩৫ হাজারের বেশি। এবার তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে তাদের কর্মী সমর্থকদের একটি ভোট ইসলামী আন্দোলনের বাক্সে পড়তে পারে বলেও মনে করেন স্থানীয় অনেকে।

এ বিভাগের আরো খবর