নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ২০টি সংসদীয় আসনও পাবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু। বলেছেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।
মঙ্গলবারের এই ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফারও টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে।
নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া চতুর্থ হয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে হয়েছে তৃতীয়। দ্বিতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২টি।
মানব সেবা সংঘ নামে বিএনপিপন্থি সংগঠনের উদ্যোগে এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বুলু বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আপনি জামায়াত ইসলাম, জাতীয় পার্টি- এই দলগুলোকে নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল-ধর্মঘট করে এ দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছিলেন। আমরা এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করেছিলাম। তারপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে আপনি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্ত করলেন কী কারণে? আপনি জানেন নিরপেক্ষ ভোট হলে আপনি নির্বাচিত হতে পারবেন না।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। এরপর ওই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন বিল পাস করা হয়।
এর প্রতিবাদে বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নেয়। তবে ওই বছর আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে এবার আবার তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলনে ফিরে গেছে তারা।
আন্দোলনের কৌশলেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দলটির কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতা, পেট্রল বোমা হামলা হলেও এবার তেমন কিছু হচ্ছে না। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে দলটির একাধিক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছে।
বিএনপি তার প্রায় দুই যুগের জোট ভেঙে দিয়েছে। এর বদলে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
বুল বলেন, ‘আজকে দেশ যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। দেশের সব গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো এক মঞ্চে এসে দাঁড়াচ্ছে।
‘শেখ হাসিনা আপনি সময় থাকতে পদত্যাগ করে দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দিন। না হলে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আপনার পদত্যাগ হলে, আপনার নেতা-কর্মীদের কী অবস্থা হবে, সেটা আল্লাহ বলতে পারে, আমরা বলতে পারি না।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি এই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মৌলক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু আজকে সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কালা-কানুন। মানুষের মৌলক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র নেই।’
গত ২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের জন্য তাকে ধন্যবাদও দেন বুলু। তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এই দেশের মানুষ আর ভোট চোরদের দেখতে চায় না। ভোট চোরদের ইজ্জত করে না, সম্মান করে না। ভোট চোরদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নেই। ভোট চোরদের জনগণ আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বিবেকের তাড়নায় মনের অজান্তে এই শব্দগুলো আপনার মুখ থেকে বের হয়ে এসেছে।’