সূর্যোদয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে মেট্রোরেলে টিকিট কাটার লাইন। ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা নিতে আগে এসেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন হাজারো মানুষ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর লাইনও দীর্ঘ হতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে দেখা গেছে, আগারগাঁও স্টেশনে অপেক্ষমাণদের লাইন গেট থেকে প্রায় পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত ছেয়ে গেছে। এই লাইনে প্রথমে দাঁড়িয়ে আছেন কামরুল হাসান নামের একজন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম মেট্রোরেলে উঠতে হবে এই ভেবে রাতে ঘুম হয়নি। তাই ফজরের আজানের পর বাসা থেকে চলে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমাদের এই লাইনের আমি প্রথম ব্যক্তি। আর অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। প্রথম যাত্রী হয়ে মেট্রোরেলে উঠব, এটা ভেবেই শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে।’
তার পরই দাঁড়িয়ে আছেন ওহিদুল ইসলাম নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তিনি ফজরের নামাজ পড়ে এখানে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম মেট্রোরেলে উঠব তাই কোনো রিকশা নেইনি। ফজরের নামাজ পড়েই এখানে চলে এসেছি। যে করেই হোক প্রথম ট্রেনে উঠব।’
খাগড়াছড়ি থেকে আসা দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেসন্তানকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন গাজী আয়েশা সিদ্দিকি।
তিনি বলেন, ‘ছেলের স্কুলের ছুটিতে আমরা ঢাকায় এসেছিলাম বেড়াতে। গতকাল আমাদের গাড়ির টিকিট কাটা ছিল খাগড়াছড়ি যাওয়ার। কিন্তু যখন আমার ছেলে শুনল আজ মেট্রোরেল প্রথম চলবে, তখন সে বায়না ধরল প্রথম ট্রেনে উঠবে। তাই ফজরের নামাজ পড়ে মগবাজার থেকে এখানে চলে এসেছি। প্রথমে উঠব তাই রোমাঞ্চকর লাগছে।’
ছেলে তাহসিন আল রাফি বলে, ‘ভাইয়া কি বলব বুঝতেছি না। অন্য রকম ফিল হচ্ছে। জীবনে প্রথম, তাই ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আগে উঠি তারপর বলব কেমন অনুভূতি।’
ভোর চারটা থেকে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন চার বন্ধু। লক্ষ্য ছিল প্রথম মেট্রোট্রেনে চড়া। ট্রেনে চড়তে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনের প্রথমে ছিলেন তারা। সকালে আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেলে চড়তে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন যাত্রীরা। কেউ অফিসে যাবেন, কেউবা এসেছেন পরিবারসহ। অনেকেরই লক্ষ্য শুধু মেট্রোরেলে ঘোরা।
কথা হয় আরিফ হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। শুধু ঘুরতে তিনি মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা যাবেন। বলেন, প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়েছে, চড়ার জন্যই এসেছি।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টা ৪ মিনিটে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী প্রান্তে উদ্বোধনস্থলে তিনি এই ফলক উন্মোচন করেন। ওই সময় সরকারপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বক্তব্যের পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে সফরসঙ্গীদের নিয়ে মেট্রোরেলে চড়েন শেখ হাসিনা।