বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মৌমাছির গ্রাম

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ২২:৩৭

চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন অংশে রয়েছে ছোট-বড় ৬০টি মৌচাক। বিদ্যালয়ের সামনে ছোট-বড় কয়েকটি শিমুল, কাঁঠাল, আম, নারকেলগাছে রয়েছে আরও শতাধিক মৌচাক। শুধু বিদ্যালয়ে নয়, চৌদ্দঘড়ি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির বিভিন্ন গাছেও রয়েছে একাধিক চাক। এতে করে সব মিলিয়ে প্রায় ছয় শর বেশি মৌচাক রয়েছে।

‘মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি- দাঁড়াও না একবার ভাই/ ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময়তো নাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কবিতায় উল্লেখিত এই মৌমাছিরা প্রাকৃতিক মৌমাছি। তবে মানুষের অবিবেচনায় অন্যান্য অনেক পতঙ্গের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক মৌমাছিরাও। উড়ে চলা মৌমাছিদের ঝাঁক সহজে এখন আর খুব একটা দেখা যায় না।

তবে এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার নদী-বিচ্ছিন্ন নারায়ণপুর ইউনিয়নে। সেখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি গ্রামে ছয় শর বেশি মৌচাক দেখা গেছে। ওই এলাকায় খোলা মাঠগুলোতে ব্যাপক সরিষার আবাদ হওয়ায় এত মৌচাক একসঙ্গে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের চারদিকের কার্নিশ, জানালার সানসেট, বারান্দাসহ ভবনের চার পাশের গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অসংখ্য মৌমাছির চাক।

স্কুল ভবনে প্রায় ৬০টির বেশি মৌচাক রয়েছে

বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন অংশে রয়েছে ছোট-বড় ৬০টি মৌচাক। বিদ্যালয়ের সামনে ছোট-বড় কয়েকটি শিমুল, কাঁঠাল, আম, নারকেলগাছে রয়েছে আরও শতাধিক মৌচাক।

এসব গাছের কোনোটা আবার ভবনের খুব কাছাকাছি। তবে এত বেশি পরিমাণের মৌচাকের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পথচারীরাও মৌমাছির ভয়ে বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল বন্ধ করেছেন।স্থানীয় এবং বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিদিন মৌমাছি কোনো না কোনো মানুষকে তাড়া করে এবং হুল ফোটায় । এ কারণে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। শুধু বিদ্যালয়ে নয়, চৌদ্দঘড়ি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির বিভিন্ন গাছেও রয়েছে একাধিক চাক। এতে করে সব মিলিয়ে প্রায় ছয় শর বেশি মৌচাক রয়েছে।

গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও গাছে প্রায় ছয় শর বেশি মৌচাক দেখা গেছে

স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল, জয়নালসহ অনেকেই জানান, চরাঞ্চলে এ সময় ব্যাপক সরিষার চাষ হয়। এই সরিষার মধু সংগ্রহ করতেই প্রতি বছর নভেম্বর মাসে গ্রামে মৌমাছির আগমন ঘটে। আশপাশের বন-জঙ্গল না থাকায় বিদ্যালয় এবং পাশের গাছগাছালিতে মৌচাক বানায় তারা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘অসংখ্য মৌমাছি সব সময় উড়ে বেড়ায়। এসব মৌমাছি অনেক সময় হুল ফুটিয়ে দেয়। ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করেছে। আমারও স্কুলে আসতে ভয় লাগে।’স্কুলটির পিয়ন সোহেল রানা বলেন, ‘প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে স্কুলের ক্লাস রুম খুলে দিয়ে অফিসের জানালা-দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকি। স্কুলের বারান্দা এবং অফিসের সঙ্গেও মৌমাছির চাক রয়েছে। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র সেন বলেন, ‘প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মৌমাছির উপদ্রব সহ্য করতে হয়। এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু বিদ্যালয় ভবন এবং আশপাশের গাছ মিলে তিন থেকে সাড়ে তিন শ মৌচাক রয়েছে।’

ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এবার সরিষার চাষ বেশি হওয়ায় মৌমাছির চাকের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু স্কুলেই নয়, আশপাশের অনেক বাড়িতেও মৌমাছির চাক দিয়েছে। এমনকি আমার বাড়িতেও ছয়টি চাক রয়েছে। সব মিলে আমাদের এলাকায় প্রায় ছয় শ মৌচাক রয়েছে। এসব চাক থেকে স্থানীয়রা মধু সংগ্রহ করলেও ক্ষতির পরিমাণই বেশি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। ’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় মৌমাছি আসছে। অনেকেই মধু সংগ্রহ করতে কৃত্রিম মৌচাকও বসিয়েছেন। অনেক স্থানে মৌমাছি নিরাপদ স্থান ভেবে চাক বসাচ্ছে। সরিষার আবাদ ভালো হওয়ায় চাকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর