বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাথার ওপর দিয়ে ট্রেন চলে, মিরপুরে কৌতূহল

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৪

মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের আগ্রহ, কৌতূহলের শেষ নেই। বুধবার সকাল হতেই আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ নম্বর পর্যন্ত উৎসুক মানুষের ভিড়। উদ্বোধনের পর বাড়ে জটলা। প্রথম দিন ওঠা যাবে না জেনেও রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে মানুষ, সঙ্গী হয়েছে স্বপ্ন-যাত্রার।

মাথার ওপর দিয়ে এত্ত বড় ট্রেন কীভাবে যায়? ট্রেনের মধ্যে কি মানুষ থাকে! ট্রেন কি অনেক জোরে চলে যায়? চলতে চলতে আবার কি নিচে নামে!

৯ বছরের স্বপ্নিলের মনে এ রকম হাজারো প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই সন্তানকে নিয়ে আগারগাঁওয়ে আসেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম।

উদ্বোধনের পর আগারগাঁও স্টেশনের ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে স্বপ্নিল। পুরোটা সময়জুড়েই ওপরের দিকে তার কৌতূহলী চোখ। শফিকুল ইসলাম বলেন, 'মেট্রোরেল নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ওর জিজ্ঞাসা ছিল। শুধু প্রশ্ন করে, তাই নিজ চোখে দেখাতে নিয়ে এসেছি।'

হ্যাঁ, মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের আগ্রহ, কৌতূহলের শেষ নেই। বুধবার সকাল হতেই আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ নম্বর পর্যন্ত উৎসুক মানুষের ভিড়। উদ্বোধনের পর বাড়ে জটলা। প্রথম দিন ওঠা যাবে না জেনেও রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে মানুষ, সঙ্গী হয়েছে স্বপ্ন-যাত্রার।

সকাল থেকেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের চোখ ছিল মেট্রোরেলে। স্টিল ছবি, ভিডিও, ফেসবুক-ইউটিউবে লাইভ, আলাদা কনটেন্ট তৈরি, সেলফি- আরও কত-কী! সময়কে ধরে রাখতে ছিল নানা চেষ্টা। শুরুর দিনের স্মৃতি ধরে রাখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। তাদের কথা, এই দিনটি বারবার আসবে না। তাই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে চায় সবাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরার দিয়াবাড়ী স্টেশনে পতাকা উড়িয়ে মেট্রোরেল ‍উদ্বোধন করেন

মিরপুরের মাজার রোড থেকে আসা তাসনুভা বলেন, ‘আধুনিক এমন সুবিধা উন্নত দেশে দেখা যায়। বাংলাদেশে এমন সেবা শুরু সত্যি বিস্ময়।’

শ্যামলী থেকে আসা রবিউল বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সেতু এলাকায় ছিলাম। আজও আগারগাঁও প্রান্তে আছি। দুটি ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী আমি। এ এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি।’

শেওড়াপাড়ায় মেট্রোরেলের পিলারের নিচে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন দুইজন। একজন বিপ্লব, অন্যজন নিঝুম। স্মৃতিটুকু ধরে রাখতেই আসা।

বিপ্লব বলেন, ‘আজ থেকে ২০-৩০ বছর পর এমন দৃশ্য দেখলে আবেগতাড়িত হব। নিশ্চয়ই তখন চোখে জল চলে আসবে।’

পঞ্চাশোর্ধ্ব আবু মুসা দূর থেকে দেখছেন ট্রেন কীভাবে যায়। বলেন, ‘চড়তে পারব কি না, জানি না। তবে দেখে বুকটা ভরে গেল।’

নানান ভঙ্গিমায় মেট্রোরেলের পোস্টার ধরে ছবি তুলছেন কলেজপড়ুয়া স্মৃতি। বলেন, ‘আগামীকালই ট্রেনে চেপে বসতে পারি। উত্তরায় গিয়ে আবার ফিরে আসব।’

মেট্রোরেল চালু হবার পর তা নিজ চোখে দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম। জীবনের শেষ সময়ে এসে এই চাওয়া মনের অজান্তেই উঁকি দিত দিনভর।

শেওড়াপাড়ায় বসবাসরত এই বৃদ্ধ দুপুরে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শুধু দেখছি কাজ হচ্ছে। কিন্তু কবে শেষ হবে, আদৌ দেখে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধায় ছিলাম। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।’

নতুন আশায় ব্যবসায়ীরা

আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে বছরের পর বছর মিরপুরের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিগত সাত বছরের অধিকাংশ সময় নির্মাণকাজের কারণে রাস্তা এক পাশ বন্ধ করে আরেক পাশে যাওয়া-আসা দুটোই করতে হয়েছে। ফলে যানজট ছিল এ এলাকার নিত্যসঙ্গী। অনেকে যানজটের কারণে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলেও গেছেন।

বৃহস্পতিবার দিয়াবাড়ী থেকে যাত্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে আগারগাঁও পর্যন্ত ছুটতে শুরু করবে ট্রেনগুলো। আগামী বছরের ডিসেম্বরে চালু হবে মতিঝল অব্দি

ব্যবসায়ীরাও কঠিন সময় পার করেছেন। সাত বছর আগে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় থেকেই ব্যবসায় ক্ষতি গুনেছেন তারা। তাদের সেই দুর্দশা করোনা মহামারিতে বাড়ে আরও।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১০ গোলচত্বর পর্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই পথে রাস্তার দুপাশে সারি সারি আসবাবপত্র, পর্দা, বিছানা চাদর, জুতা, রেস্টুরেন্ট ছাড়াও ছিল মুদি ও মনিহারি দোকানও। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই ছিল রাস্তা বন্ধ। ঘুরে দোকানে ঢুকতে হতো। ফলে দোকানে বেচাকেনা ছিল না বললেই চলে।

দোকানরা জানান, নির্মাণকাজের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ক্রেতা হারিয়ে তারা লাখ লাখ টাকার দেনায় পড়েছেন। বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকান টিকিয়ে রাখতে অনেককে নিজের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। কেউ আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হয়ে গেছেন খেলাপি।

শেওড়াপাড়া মুসলিম সুইটস এর চারটি দোকান ছিল। মেট্রোর কাজের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দুটি। তবে নতুনভাবে দোকান দিচ্ছেন মুসলিমের মালিক।

দোকানি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে দুটি চালু আছে আর একটি নতুনভাবে শুরু করেছি। স্টেশনের নিচের দোকানে আগে বেকারি সামগ্রী বিক্রি করা হতো। সেখানে এখন থেকে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, খেজুর, মধু, কালোজিরা, সরিষার তেলসহ অর্গানিক পণ্য বিক্রি করা হবে।

‘মেট্রোরেল চালু হয়ে গেছে। আর ২/৩ মাসের মধ্যে শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হবে। তখন দোকানের বিক্রি আরও বাড়বে।’

যাত্রীদের পাশাপাশি মেট্রোরেলের লাইনের দুই পাশের দোকানিরাও হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। নির্মাণ কাজ শুরুর পর পাঁচটি বছর চরম দুর্ভোগ আর লোকসানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের

শেওড়াপাড়ার পূর্বপ্রান্তে মুদি দোকানি স্বপন খান। তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে এখানে দোকান করি। প্রথমে দোকান রাস্তার পাশে ছিল। মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু হওয়ার পর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওইখানের দোকান উঠিয়ে দেয়া হয়। ভেতরে এসে আবার দোকান করি।

‘প্রথমে খুব আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলাম। অনেক কাস্টমার মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভবে চলাফেলা করতে পারেনি। দৈনিক ৪০ হাজার, ৫০ হাজার, এমনি ৮০ হাজার টাকাও বিক্রি হতো। মেট্রোর নির্মাণ শুরুর পর আর কাস্টমার আসতে পারেনি। বেচাকেনা কমতে কমতে প্রায় জিরোতে চলে যায়। কিন্তু এখন আবার ব্যবসা ফিরতে শুরু করেছে।’

বইখাতাসহ স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রি করেন হামিদ আলী। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর কষ্টে গেছে। ব্যবসা নেমেছে অর্ধেকে। কষ্টের সময় শেষ। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে ভালো আছি। এখানে অনেক অনেক নাম করা স্কুল-কলেজ আছে। এই এলাকা আগের চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রায় সরগরম হয়ে উঠবে।’

পর্দা, বিছানা চাদরসহ গৃহস্থালী সামগ্রী বিক্রেতা শফিকুল আলম বলেন, ‘মেট্রোরেল চালুর কারণে মিরপুর এলাকায় ব্যবসা আরও বাড়বে। কারণ মিরপুরে সব শ্রেণি–পেশার মানুষ বসবাস করেন। মানুষের সমাগম বাড়লে বাড়বে ব্যবসাও।’

এ বিভাগের আরো খবর