বিএনপির ভেঙে দেয়া ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি ১২ দলীয় জোট গঠনের পর বাকি কিছু শরিক গড়ে তুলল নতুন জোট, যার নাম দেয়া হয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এরাও বিএনপির দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছে।
১৯৯৯ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে গড়ে তোলা জোট ধীরে ধীরে ২০ দলীয় হয়ে গেলেও এতে দলের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। কারণ, ছোট ছোট দল ভেঙে গিয়ে একই নামে ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে গড়ে তোলে আলাদা দল। সেই দলও আবার ২০ দলে ছিল।
বিএনপি শরিকদের না জানিয়ে ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়। ৮ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের জোট ভেঙে দেয়ার বিষয়টি জানান। পরদিন কয়েকটি শরিক দলকে ডেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় সিদ্ধান্ত।
এরপর ২২ ডিসেম্বর ১২টি দল একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, তারা একটি জোট গঠন করেছে। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কচ্যুতি হলেও তাদের জোট বিরোধী দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে।
এর ছয় দিন পর বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জোটের ঘোষণা দেন।
শরিক দল কারা
জোটে আছে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি বা এনপিপি, খন্দকার লুৎফর রহমান ও এসএম শাহাদাত হোসেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও আকবর হোসেনের ডেমোক্রেটিক লীগ, গরিবে নেওয়াজ ও সৈয়দ মাহবুব হোসেনের পিপলস লীগ, আবদুর রকিব ও আব্দুল করিমের ইসলামী ঐক্যজোট, এম এন শাওন সাদেকী ও দিলীপ কুমার দাসের বাংলাদেশ ন্যাপ, নুরুল আমিন বেপারী ও শাহ আহমেদ বাদলের বিকল্প ধারা, নূরুল ইসলামের সাম্যবাদী দল, এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও আবু সৈয়দের গণদল, আজহারুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা আকন্দের ন্যাপ ভাসানী এবং সুকৃতি মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি।
বিএনপির কর্মসূচিতে সমর্থন
নতুন জোটের ঘোষণা দিয়ে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ঘোষণাপত্র পাঠকালে বলেন, ‘ইতিমধ্যে, গণ আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জ্ঞাপন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন একদলীয় আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত মহাসংকটের এক যুগ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ আজ নিপতিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভয়াবহ বেকারত্ব, কর্মশূন্যতায় দেশের মানুষ দিশেহারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়পরায়ণতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছর পরও আজ স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার, ভাতের অধিকার, কর্মের অধিকার, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আজ প্রশাসনিক দুর্বৃত্তের কবলে।’
আওয়ামী সরকার কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রাখতে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মামলা হামলা, গণ গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এক বিভীষিকাময় সংস্কৃতি তৈরি করেছে।’
উন্নয়নের জিকির তুলে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে আর্থিক খাত, ব্যাংক, বিমা সেক্টর, করপোরেশনে লুটপাট চালানোর অভিযোগও করেন নতুন জোটের নেতা। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের সকল সেবা খাত, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট বাজার আজ সরকারদলীয় লুটেরাদের হাতে জিম্মি।’