নানা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা সরকারবিরোধীরা মেট্রোরেল নিয়ে কিছু বলতে না পেরে এখন ভাড়া নিয়ে মেতেছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মাণ হয়েছে লাইনটি, যেটি যানজটের এই শহরে দ্রুত চলাচল নিশ্চিত করবে।
এটিসহ ছয়টি মেট্রোরেল লাইনের পরিকল্পনা আছে সরকারের, যার মধ্যে প্রথমটির রুট উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। তবে পুরো পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে ২০২৫ সালে। প্রথম পর্বে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত, আগামী বছরের ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত রুট চালুর ঘোষণা আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে আপনার সরকারের সাফল্যের মুকুটে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি হিরন্ময় পালক। দিকে দিকে ধ্বনিত হচ্ছে শেখ হাসিনার অর্জন, গণপরিবহনে মেট্রোরেল সংযোজন। শেখ হাসিনার অবদান, বাংলাদেশের ঢাকায় মেট্রোরেল দৃশ্যমান।’
সব প্রকল্প নিয়ে বিরোধী পক্ষের সমালোচনা থাকলেও এই প্রকল্পটি নিয়ে তেমন কোনো বিরোধিতা না থাকার কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, ‘এখন মেট্রোরেল নিয়ে কিছু বলতে পারছে না। দুর্নীতি নিয়ে কিছু বলতে পারে না। এখন বলছে ভাড়া বেশি।’
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে ১০০ টাকা। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা। মতিঝিল থেকেও মিরপুর ১০ পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা, মিরপুর-১১ পর্যন্ত ৭০ টাকা, পল্লবীতে ৮০ টাকা। আর কমলাপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া ঠিক হয়েছে ৩০ টাকা।
এতে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক হয়েছে ২০ টাকা। দুটি স্টেশনের পর প্রতি স্টেশন যেতে ভাড়া দিতে হবে বাড়তি ১০ টাকা।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, এই ভাড়া বেশি।
দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সেদিন তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আর কলকাতার চেয়ে তিন গুণ। এই ভাড়া ঢাকায় চলাচল করা বাসের চেয়ে দ্বিগুণ ও কলকাতা মেট্রোরেলের তিন গুণ।
‘জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ গণতান্ত্রিক সরকার হলে এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। এজন্য গণবিরোধী এই সরকারের পতন ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
ওবায়দুল কাদের সমাবেশে তুলে ধরেন নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা। তিনি মনে করেন, সরকারের সাফল্যে বিরোধীপক্ষের গায়ে জ্বালা ধরছে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মনে অনেকেরই জ্বালা। অন্তর জ্বালায় মরে। বড়ই অন্তর জ্বালা।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো আছে। তাই ওদের মনে জ্বালা। অন্তর জ্বালায় মরে। নিজেরা দেখাবে কিছু কি আছে?’
প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেতে যাত্রা শুরু করে মেট্রোরেলএই রুটের লাইন নিয়ে যে বিরোধিতার কীভাবে সমাধান হয়েছে, সেটিও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মানববন্ধন করবেন। নেত্রী বললেন ওদেরকে বলো শিক্ষকসহ যে এই মেট্রোরেলে কোনো আওয়াজ নেই। কোনো শব্দ দূষণ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নারীদের জন্য একটা স্পেশাল টান আছে। এই জন্য বলেছেন, একটা বগি নারীদের জন্য থাকবে। ওখানে শুধু নারীরা বসবে। নারীরা অন্য বগিতেও বসতে পারবে। তবে তাদের জন্য একটা ফিক্সড করা আছে। নেত্রী আর একটা কাজ করেছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্রি করে দিয়েছেন।’
মেট্রোরেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের স্মৃতিচারণও করেন কাদের। বলেন, ‘আমার আজ বারে বারে মনে পড়ছে এই দিয়াবাড়ীতে ২০১৪ সালে জুনের ১১ তারিখে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছিল। সে কি প্রচণ্ড ঝড়, সঙ্গে প্রবল বর্ষণ। মঞ্চ ভেঙে গেল, প্যান্ডেল উড়ে গেল।
‘সে কঠিন সময়। আশে পাশে আজ এত স্থাপনা, আমরা দাঁড়াবার মতো ছাদের নিচে কোনো জায়গা ছিল না। সে অবস্থায় কাকভেজা হয়ে এখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। আজ সেই মেট্রোরেল কোনো স্বপ্ন নয়, আজ সেটা দৃশ্যমান ও বাস্তবতা।’
‘শেখের বেটি দেখিয়ে দিয়েছে’
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গও উঠে আসে তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘শেখের বেটি দেখিয়ে দিয়েছে। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে দেখিয়ে দিয়েছে। ইয়েস উই ক্যান। মেট্রোরেল করে দেখিয়ে দিয়েছে। ইয়েস উই ক্যান। কেন আমরা পারবো না? আমরা বীরের জাতি। বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিতে পারে। তারা অপবাদ দিয়েছে। আমি বলতে চাই, আমরা চোরের জাতি নয়।
‘তারা বলেছেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু হয়েছে। এখন যাচ্ছেন কীভাবে সমাবেশ করার জন্য। তিন ঘণ্টায় খুলনায় চলে গেলেন। জীবনে পেরেছেন?’
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান উদ্বোধনের স্মৃতিচারণও করেন কাদের। বলেন, “সবাই বলছিল, প্রথম স্প্যান উদ্বোধনের কী দরকার আছে প্রধানমন্ত্রীর? আমি নেত্রীকে বলেছিলাম যে, আপনি প্রথম স্প্যান টা ১০-১৫ দিন পরে এসে উদ্বোধন করবেন, এটাই আমরা আশা করে আছি। আপনি (শেখ হাসিনা) এ দেশকে কত ভালোবাসেন। আপনি বলেছিলেন, ‘আমার জন্য পদ্মা সেতুর কাজ এক সেকেন্ডও বসে থাকবে না।’ সে কথা আমার বারবার মনে পড়ছে।”
‘এক দিনে শত সেতুর উদ্বোধন গুগলেও নেই’
কিছুদিন আগে ভার্চুয়ালি এক দিনে এক শর বেশি সেতু উদ্বোধনের কথাও তুলে ধরেন সেতু মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব তো শেখ হাসিনার সরকার করছে। কিছুদিন আগেও আমরা একদিনে শত সেতুর উদ্বোধন করেছি। দেখেছেন কোথাও? গুগলেও নেই।
‘শত রাস্তা, শত সড়ক এক দিনে নতুন, প্রথম। মেট্রোরেল ঢাকায় প্রথম। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রথম। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আসছে সামনের বছর, এটাও প্রথম। ঢাকা থেকে গাজীপুর বাস ট্রাপিড ট্রানজিট, এটাও প্রথম।’