বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় মিরপুরবাসী

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৫৫

মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন ক্রেতার দেখা পায়নি। লোকসান গুনতে গুনতে কেউ কেউ ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন, তবে পুরোনো ব্যবসায়ীদের অনেকে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজিয়েছেন। পাশাপাশি এসেছে অনেক নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া সড়কের পাশেই ফুটপাতে ফল বিক্রি করেন তফির উদ্দিন। এক স্থানেই দোকান পেতে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় একযুগ। কিন্তু জীবিকায় ছন্দপতন এনে দেয় মেট্রোরেল। প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পর ১৫ থেকে ২০ বার জায়গা পরিবর্তন করেন তফির, তবে এ ভাঙাচোরা রাস্ত ও ধুলাবালির মধ্যে ক্রেতা না আসায় এক পর্যায়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি।

তফির উদ্দিন জানান, একদিন-দুইদিন না। টানা কয়েক বছরের ফুটপাতে দোকান বসতে দেয়া হয়নি। ভারী ভারী যন্ত্রাংশ রাখায় ও রাস্তা কেটে ফেলায় তার ব্যবসাই বন্ধ রাখতে হয়।

পঞ্চাশোর্ধ এই ব্যক্তির মতো এমন দুর্ভোগের স্মৃতি হাজার হাজার মিরপুরবাসীর। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরুর পর ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সঙ্গে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, তালতলা, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে গুটিয়ে নিয়েছে ব্যবসা। স্থানীয়দের একটাই প্রশ্ন ছিল, কবে শেষ হবে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ, কবে মিলবে মুক্তি।

অবশেষে চলে এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। খুলে দেয়া হয়েছে স্বপ্নের দ্বার। প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরই বৃহস্পতিবার থেকে চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা পাবে মিরপুরের বাসিন্দারা।

সকালে শেওড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবার চোখেমুখে দেখা গেছে উৎসাহ-উদ্দীপনার ছাপ। তারা বলছেন, এমন বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সাহসিকতার নজির।

স্বপ্নযাত্রার প্রত্যক্ষদর্শী

প্রায় ২০ বছর ধরে শেওড়াপাড়ার বাটার গলিতে বসবাসরত আব্দুল করিম বলেন, ‘জীবনের শেষ বয়সে এমন উন্নয়ন কাজের প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারবো ভাবতে পারিনি। টিভিতে বিভিন্ন দেশের মেট্রোরেলের ছবি দেখতে পাই, কিন্তু নিজ দেশে চোখের সামনেই বিশাল এই কর্মযজ্ঞ আমাকে উদ্বেলিত করেছে।’

একই এলাকায় ওষুধের দোকানি এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘আমরা মিরপুরবাসী দীর্ঘদিন মেট্রোরেলের কাজের জন্য ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এটা চালুর মাধ্যমে আমরা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব। ব্যবসায় সুফল আসবে।’

কসমেটিকস ব্যবসায়ী মামুন হোসেন বলেন, ‘মেট্রোরেলের ভাড়া একটু বেশি। তবে এই রেল সব শ্রেণির মানুষের জন্য নয়। যারা সময় বাঁচিয়ে দ্রুত গন্তব্য যাবেন তারাই এটা ব্যবহার করবেন।’

জুতা ব্যবসায়ী ফরিদ হাসান জানান, এলাকার চেহারা দেখে মনে হয়, উন্নত কোনো দেশে আমরা বাস করছি। নিজ এলাকায় এমন ট্রেনের সুবিধা নেয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই আবেগের।

ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শরিফ হোসেন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেই কয়েক বছর ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। শুধু আশা ছিল, একদিন কপাল ফিরবে। হ্যাঁ, আমরা এই সময়ের জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা এখন একটু ভালো থাকতে পারবো। ব্যবসা হয়তো এখন ভালো হবে।’

মাথার ওপর দিয়ে মেট্রোরেল চলার এমন বিরল অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষদর্শী হতে পেরে কান্না আটকে রাখতে পারেননি বৃদ্ধ করিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘এক সময় মনে হতো, হয়তো দেখে যেতে পারবো না। খুব ইচ্ছা হতো, কীভাবে চলবে ট্রেন, তা দেখার। আজ সেটা সত্যি হতে চলেছে।’

পাল্টে গেছে জীবনযাত্রা

শেওড়াপাড়ার মেট্রোরেল স্টেশনকে ঘিরে হয়েছে নতুন নতুন অনেক ব্যবসা। ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে অনেকেই।

স্টেশনের ঠিক নিচেই সুলতান আহমদের ছোট্ট একটি দোকান । কফির সঙ্গে অল্প কিছু শুকনা খাবার বিক্রি করেন তিনি। স্টেশন নির্মাণের সময় সুলতানের দোকানের সামনের অংশ ভাঙা পড়ে৷

তিনি বলেন, ‘প্রথম দোকানের সামনে ভাঙা হলে খুব মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু মেট্রোরেলের স্টেশন হওয়ায় এখন আর চিন্তা নেই। ব্যবসা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। গত সাত বছর মিরপুরের ভোগান্তি নিয়ে ট্রল করেছে মানুষ। এখন রাস্তা অনেক ঝকঝকে হয়ে গেছে। আজ মেট্রোরেল চালুর এই দিনে আগের ভোগান্তির কথা ভুলেই গেছি।’

মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন ক্রেতার দেখা পায়নি। লোকসান গুনতে গুনতে কেউ কেউ ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন, তবে পুরোনো ব্যবসায়ীদের অনেকে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজিয়েছেন। পাশাপাশি এসেছে অনেক নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

শেওড়াপাড়া এলাকার স্টেশনের ঠিক নিচেই ছিল মুসলিম সুইটস, তবে এই দোকানে এখন মিষ্টি ও বেকারি বাদ দিয়ে বিক্রি হচ্ছে অর্গানিক পণ্য। দোকানি হোসেন মিয়া বলেন, নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেছি। এখন থেকে মধু, ঘি, খেজুর, বাদাম এসব বিক্রি করব।

উৎসুক মানুষের ভিড়

মেট্রোরেল চলার দৃশ্য দেখতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিরপুরে ভিড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ।

শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০-এ দেখা গেছে উৎসুক জনতার ভিড়।

রিকশাচালক মনির হোসেন বলেন, ‘রেল কেমনে চলবে তাই দেখতে আইছি। নিচে দাঁড়ায়ে তো রেল দেখা যাইব না। কাল ছাড়লে উঠমু।’

বাবার সঙ্গে স্টেশন ঘুরতে আসা পাঁচ বছরের শাফিন বলে, ‘বাবা বলেছে কাল মেট্রোরেলে ওঠাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর