স্বপ্নের মেট্রোরেল বুধবার উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ মানুষের চলাচল শুরু হবে বৃহস্পতিবার।
শুরুতে উত্তরা প্রান্ত থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অনেকগুলো স্টেশন থাকলেও কোথাও দাঁড়াবে না ঢাকার শহরের নতুন এই গণপরিবহন। শুরুর দিকে ট্রেনের সংখ্যাও থাকবে বেশ কম।
তবে আগামী স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হবে এই সেবা। তখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রতিটি স্টেশনে ৪৫ সেকেন্ড ট্রেন থামানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। তবে মানুষের অভ্যস্ততা তৈরির সুযোগ দিতে এই সময় এক মিনিটের মতো করা হতে পারে।
আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও বা আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিরতিহীন যাত্রী সেবা পেতে গুণতে হবে ৬০ টাকা। ১০ মিনিট পর পর ট্রেন আসবে এবং এক সঙ্গে ২০০ জন যাত্রী এই ট্রেনে উঠার সুযোগ পাবেন।
ম্যাস ট্রানজটি কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে উত্তরা উত্তর (শুরুর স্টেশন) থেকে একটি ট্রেন ছাড়বে। আর একটি আগারগাঁও থেকে ছাড়বে। ১০ মিনিট পর পর এই ট্রেন ছাড়বে। এই পুরো লাইনে আর কোনো স্টেশনে ট্রেন থামবে না।’
এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ জানিয়ে ডিএমটিসিএল-এর এমডি বলেন, ‘মানুষের অভ্যস্ততা তৈরির জন্য প্রথমে আমরা এভাবেই চালাব। যাত্রী না হলে ট্রেন কম চলবে। মানুষ অভ্যস্ত হলে পরে ধীরে ধীরে আমরা অন্য স্টেশনে ট্রেন থামাব।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত ২৯ তারিখ থেকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল করবে। বিকেলে কোনো ট্রেন চলবে না।’
তবে যাত্রীদের আশানুরূপ সাড়া না পেলেও সেখানে পরিবর্তন আসবে বলে জানান এমএএন ছিদ্দিক।
তিনি বলেন, ‘তবে মানুষ যদি কম থাকে বা মানুষকে যদি অভ্যস্ত করতে না পারি তাহলে এর চেয়েও কম সময় চলবে ট্রেন। তারপর সাত দিন দেখে আমরা রিভিউ করব। তখন যদি মনে হয় এই সময় আরও বাড়ানোও দরকার বা বিকেলে ট্রেন চালানো দরকার, তাহলে তখন আমরা নতুন করে আবার সিদ্ধান্ত নেব।’
রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে আপাতত সপ্তাহে একদিন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কারণ একদিন যদি আমরা মেইনটেইন্যান্স না করি তাহলে যে কোনো চ্যালঞ্জে উদ্ভব হতে পারে।’
যাত্রীদের কেমন সাড়া মিলছে তার ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনারও বিষয়টিও মাথায় রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিদ্দিক বলেন, ‘১০ মিনিট পর পর ট্রেন আসবে এবং ২০০ মানুষ এই ট্রেনে উঠার সুযোগ পাবে।
‘এই ১০ মিনিটে উঠতে না পারে তাহলে আমরা আস্তে আস্তে ১০ মিনিটের জায়গায় ১৫ মিনিট অথবা ২০ করে দেব। আমরা চেষ্টা করছি ২০০ মানুষকে অভ্যস্ত করতে।’
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতিটি স্টেশনে ৪৫ সেকেন্ডের জন্য ট্রেন থামার কথা। পুরোপুরি চালুর পর এমন সময় নির্ধারণেরই পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল রুট চালু হওয়ার পর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট। এর মধ্যে ১৬টি স্টেশনে মোট ১৭ মিনিট থামবে ট্রেন। সে হিসেবে প্রতিটি স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়তে সময় পাওয়া যাবে এক মিনিটের সামান্য কিছু বেশি সময়।
মেট্রো ট্রেনে চড়ার টিকিট মিলবে বৃহস্পতিবার থেকে। ডিএমটিসিএল-এর এমডি এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘২৯ তারিখ থেকেই স্টেশনে যাত্রীরা সিঙ্গেল টিকিট, র্যাপিড পাস, এমআরটি পাস কিনতে পারবেন।’
যাত্রীদের টিকিট কেনার কাজ সহজ করেতে স্টেশনগুলোতে প্রশিক্ষিত জনবল থাকবে বলে জানান এমএএন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘স্টেশনের প্রতিটা টিকিট মেশিনের সামনেই স্কাউটের সদস্যরা থাকবেন। আমরা তাদের ট্রেনিং দিয়েছি। তারা যাত্রীদের মেশিনে টিকিট কাটতে সাহায্য করবেন।’
সাধারণ মানুষকে মেট্রোরেলে অভ্যস্ত করা এবং নিয়মকানুন শেখাতেও বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের স্কাউট থাকবেন, আমাদের কর্মীরা থাকবেন। তারা মানুষকে দিক-নির্দেশনা দেবেন।’