রাত পোহালেই রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সিটি মেয়র কে হচ্ছেন তার ফয়সালা হবে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোটের মধ্য দিয়ে ভোটাররা তাদের মেয়রকে বেছে নেবেন।
এদিকে শেষ সময়ে কোন মেয়রপ্রার্থী কত ভোট পাবেন, কে হবেন মেয়র এসব নিয়েই এখন আলোচনা। একই অবস্থা কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও।
তবে, ভোট নিয়ে অনেকটা নির্ভার জাতীয় পার্টি। দলটির রংপুর সিটি নির্বাচনের পরিচালনা কমিটি মনে করছে তাদের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দ্বিগুন ভোটে জয় পাবেন।
যদিও তা মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। তার দাবি, ‘নগরবাসী এবার উন্নয়নের মার্কা নৌকায় ভোট দেবেন।’জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, ‘নির্বাচনে বিজয়ী হবে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং পরাজিত প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের ফারাক হবে দেড় থেকে দুই লাখ।’
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয়বারের নির্বাচন। এর আগে দুইবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ২০১২ সালের নির্বাচন হয়েছিল দলীয় প্রতীক ছাড়া। আর ২০১৭ সালের নির্বাচন হয়েছিল দলীয় প্রতীকে। গত দুই নির্বাচনে একবার ক্ষমতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ ও দ্বিতীয়বার মেয়র পায় জাতীয় পার্টি।
২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বরের ভোটে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ৯৮ হাজার ৮০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন রংপুর সিটির প্রথম মেয়র প্রয়াত সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুকে। ওই নির্বাচনে মোস্তফা পেয়েছিলেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৮২৪ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬১ হাজার ৫৫৭ ভোট।
মোস্তফা-ঝন্টু ছাড়াও নির্বাচনে লড়েছিলেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৭৯১ ভোট। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৭১৮ ভোট।নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ২৪৮টি। নষ্ট হয়েছিল ৬ হাজার ২৭৩টি ভোট। এর মধ্যে ছয় প্রার্থী মিলে ভোট পান এক লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট। আর মোস্তফা একাই পেয়েছিলেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৮২৪ ভোট। যা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৯৮ হাজার ২৮৭ ভোট বেশি।
নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘এবার ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে নামেননি। এ কারণে ২০১৭ সালের চেয়ে নৌকার ভোট কম হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকা সাবেক মেয়র মরহুম সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুর ভাগনি জামাই লতিফুর রহমান মিলনও রয়েছেন আলোচনায়। তাই দ্বিতীয় অবস্থানে কোন প্রার্থী যাবেন তা অনুমান করা যাচ্ছে না। এবার ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীর ভোট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ভোট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে জনগণ প্রায় এক লাখ ভোট আমাকে বেশি দিয়েছিল। আমি মনে করি, এবারের ভোটটা একতরফা হবে। ভোটের হিসাব বদলে যাবে। আমার বিশ্বাস গতবারের থেকে এবার অনেক বেশি ভোট দিবে জনগণ।’
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াও জনগণের ওপরই আস্থা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘যেখানেই গিয়েছি সেখানে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক করেছেন, অনেক দিয়েছেন।
আমরা রংপুরবাসী প্রধানমন্ত্রীকে কিছু দিতে পারিনি। আমার বিশ্বাস রংপুরবাসী এবার নৌকায় ভোট দেবে। কারণ, এই নগরীতে পরিকল্পিত কোনো উন্নয়ন হয়নি, সাবেক মেয়র সেটা করতে পারেননি।’নির্বাচনে লাঙল ও নৌকার প্রার্থী ছাড়াও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, গোলাপ ফুল প্রতীকে খোরশেদ আলম, দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের শফিয়ার রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লতিফুর রহমান মিলন ও মেহেদী হাসান বণি মেয়র পদে লড়ছেন।
এছাড়া ১৭৮ জন সাধারণ এবং ৬৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে যাতে ভোটগ্রহণ শুরু করা যায় সেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইভিএমের কারিগরি ত্রুটির কারণে ভোটগ্রহণে কোনো অসুবিধা যাতে না হয় সে জন্য বাড়তি ইভিএম আছে। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তা রিপ্লেস করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভোট নেবেন তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা বলে দিয়েছি তারা যেন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। কোনো অনিয়ম হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’নির্বাচন ঘিরে শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতে পুিলশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। ৬ স্তরের নিরাপত্তা বলয় রয়েছে।’