বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘উইনিং কম্বিনেশন’ ভাঙতে চাননি শেখ হাসিনা

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:১৫

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হারুন-অর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের এক বছর আগে এমন ‘উইনিং কম্বিনেশন’ কেউ ভাঙবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এই টিম নিয়ে কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। দলের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেছেন। যদি সব উইং ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে পরিবর্তনের প্রয়োজন কী?’’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এই কমিটি নিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তাই জাতীয় নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে পরীক্ষিত, ভারসাম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী এই সাংগঠনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে বাড়তি ঝুঁকি নিতে চায়নি ক্ষমতাসীন দলটি। এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক।

এর কারণ হিসেবে বলা হয়, নেতৃত্বে পরিবর্তন হলে নতুন করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে উঠতে সময় লেগে যায়। এ ছাড়া দলের বিভিন্ন বলয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ সাময়িকভাবে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও এড়ানো গেছে এতে। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন এবং অন্যান্য চক্রান্ত মোকাবিলায় কমিটিতে সমন্বয়হীনতা তৈরি হতে পারত।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে, সামনে কঠিন সময়। জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে হবে। তার আগে সামলাতে হবে বিএনপিসহ তাদের সমমনা জোটগুলোর রাজপথের কর্মসূচি এবং পর্দার আড়ালের কর্মকাণ্ড। একটি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ টিম না থাকলে সেটা অনেক কঠিন হবে। যেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অন্তত তিন বছরের কাজের সম্পর্ক রয়েছে, সেখানে কমিটিতে পরিবর্তন আনলে সেই বোঝাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে। আর নতুন করে তা গড়ে উঠতেও সময় লাগবে।

ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ কেউ চেয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসুক। কিন্তু নির্বাচনের এত অল্প সময় আগে দলের টিউনিং ভাঙা ঠিক হতো না। কেননা নতুন কেউ এ পদে এলে ফের মেরুকরণ হতো। দলের অভ্যন্তরে বড় ধরনের নাড়াচাড়া হতো, যা এই মুহূর্তে নির্বাচন ও বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা থেকে দলের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারত।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হারুন-অর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের এক বছর আগে এমন ‘উইনিং কম্বিনেশন’ কেউ ভাঙবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এই টিম নিয়ে কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। দলের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেছেন। যদি সব উইং ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে পরিবর্তনের প্রয়োজন কী?’’

এত কিছু পরিষ্কার করে না বললেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে বক্তব্যে বড় পরিবর্তন করার পেছনের কারণ হিসেবে নির্বাচন এবং আন্দোলন মোকাবিলাকেই তুলে ধরেছেন।

ওবায়দুল কাদের রোববার বলেন, ‘আগামী নির্বাচন, বিশ্ব পরিস্থিতি সামনে রেখে আমাদের দেশেও সংকট আছে, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বিএনপির নেতৃত্বে সরকার হটানোর আন্দোলন। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ। তা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অভিজ্ঞদের রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের সভাপতি।’

এর আগে ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর ১৯ সদস্যের মধ্যে তিনজন বাদ গেছেন। তারা হলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মান্নান খান এবং রমেশ চন্দ্র সেন। যোগ হয়েছেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

তবে যারা বাদ গেছেন তারা কেউই জাতীয় রাজনীতি এমনকি দলীয় মেকানিজমেও প্রভাবশালী তেমন কেউ ছিলেন না। যদিও এদের সবাইকে উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আব্দুল মান্নান খান দীর্ঘদিন অসুস্থ। দলে বহুদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। তা ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নুরুল ইসলাম নাহিদের এসব সমস্যা না থাকলেও দলে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় তিনি। রমেশ চন্দ্র সেন বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ।

সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ গেছেন তিনজন। এদের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। তার বিরুদ্ধে সংগঠনের ভেতর থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে।

নীলফামারী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয় যে, ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কমিটি করেছেন তিনি। দলের অনেক পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াতসংশ্লিষ্ট অনেককেই কমিটিতে ঢুকিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া প্রবীণ নেতাদের সম্মান না করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শফিকের স্থলে এসেছেন গত কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। যিনি পরিশ্রমী এবং ভালো সংগঠক হিসেবে সুনামধারী। এ ছাড়া ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ এবং শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ পদ হারিয়েছেন এমনটিও বলা যায়। কেননা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাদের স্থান হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে।

এদের মধ্যে সিরাজ ছয়বার শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক ছিলেন। তার বয়সও অনেক বেশি। আর সাংগঠনিক কার্যক্রমে দুর্বলতা থাকায় হারুনকে সরানো হয়েছে।

এদিকে উপপ্রচার সম্পাদক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হয়েছেন আমিনুল ইসলাম আমিন। পরিশ্রমী, ভালো সংগঠক ও ভালো মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।

যদিও বাজারে নতুন কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, পাশাপাশি অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই সঠিক। কারণ তিনি বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা। তার সুনির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর