বাজারে সুপরিচিত সবজিগুলোর চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় হবিগঞ্জে চাষ হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আবাদ শুরু হওয়া বিভিন্ন সবজি।
এসব সবজি বিক্রি করে জেলার বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার কৃষকরা লাভবান হলেও এগুলো সহজে বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
উচ্চমূল্য এবং স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে কম ধারণা থাকায় স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকোলির মতো সবজিগুলো খুব একটা কিনতে চান না গ্রামের লোকজন। ফলে শহরে নিয়ে কিংবা অনলাইনে বিক্রি করতে হয় সবজি।
এমন বাস্তবতায় উপজেলা পর্যায়ে বিক্রয়কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা, যাতে করে পাইকার ও ক্রেতারা নিয়মিত একটি জায়গায় এসে এসব সবজি কিনে নিতে পারেন।
চাষিদের ভাষ্য, বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর চাহিদা বাড়লে সবজির উৎপাদনও বাড়ানো যাবে।
কৃষি বিভাগের ভাষ্য, উচ্চমূল্যের সবজি বিক্রি করতে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব সবজির জন্য আলাদা একটি বাজার বসানোর পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
কী বলছেন কৃষকরা
বাহুবল উপজেলার বুলকোড গ্রামের কৃষক ছানু মিয়া জানান, তিন বছর ধরে ৩০ শতক জায়গায় বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করছেন তিনি। যে জমিতে আগে শিম কিংবা আলু চাষ করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ করতেন, সেখানে স্কোয়াশ চাষে লাভ হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সামনের বছর স্কোয়াশ চাষ আরও বাড়ানোর চিন্তা করছেন তিনি।
সবজি বিক্রি সহজ করতে উপজেলায় পর্যায়ে একটি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন এ কৃষক।
বাহুবলের ব্রোকোলি চাষি ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে ১৫ হাজার ব্রোকোলি চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে এক লাখ টাকার মতো, তবে যে ফসল আসছে, আমি আশা করি তিন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারব।’
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় চাষ হচ্ছে ব্রোকোলি। ছবি: নিউজবাংলা
হাফিজপুর গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি এ বছর প্রথম ২০ শতক জায়গায় ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। আশা করছি লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এসব সবজি চাষ করতে চাই, কিন্তু সমস্যায় পড়ি বিক্রি করতে গিয়ে। বেশি দাম হওয়ায় এবং লোকজন সবজিটা না চেনার কারণে এলাকার কেউ এটা কিনতে চায় না।
‘ফলে সিলেট বা শ্রীমঙ্গল বিক্রি করতে হয়। যদি সরকার আমাদের বিক্রির একটা সুব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমরা আরও বেশি করে বিদেশি সবজি চাষ করতাম।’
কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য
বাহুবল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, ‘কৃষিকে লাভজনক করার জন্য সরকার এখন উচ্চমূল্যের ফসল চাষে জোর দিচ্ছে। এ জন্য আমি বিভিন্ন ধরনের উচ্চমূল্যের সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
‘প্রথম অবস্থায় কৃষকরা এসব সবজি চাষ করতে চায়নি। তিন বছর আগে কয়েকজন কৃষককে রাজি করিয়েছিলাম। এখন সব কৃষকই এই সবজি চাষ করতে চায়।’
বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল জানান, উচ্চমূল্যের এসব সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যদিও এসব সবজি বিক্রি করতে একটু সমস্যা হচ্ছে, তবে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চমূল্যের সবজি বিক্রির জন্য বাহুবলের মিরপুর বাজারে একটি বিক্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা চলছে। আশা করি আগামী বছর আর কোনো কৃষক বিদেশি সবজি বিক্রির জন্য সমস্যায় পড়বেন না।’