দুই সন্তান নিয়ে ঢাকা ছাড়ার সময় জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরানো হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ পদক্ষেপ বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ জানায়, জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো রাত সাড়ে ১২টায় সিঙ্গাপুরের একটি বিমানে জাপান যাওয়ার চেষ্টা করেন। অথচ আদালতের নির্দেশনা আছে, একটি মামলা বিচারাধীন থাকায় তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। সে কারণে তাদের বিমানবন্দর থেকে ফেরানো হয়েছে।
মেয়েদের বাবা ইমরান শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি একজনের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। আমার মেয়েদের জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন এক মেয়ে আমার সঙ্গে আছে, অপর মেয়ে মায়ের সঙ্গে আছে।’
বিষয়টি আপিল বিভাগে জানাবেন ইমরান শরীফ।
দুই কন্যার সঙ্গে বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফ ও জাপানি স্ত্রী নাকানো এরিকো। ছবি: সংগৃহীত
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফ জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।
এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান শরীফ বিয়ে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো।
রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। আর এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন মা।
এছাড়া দুই কন্যাকে নিয়ে গ্রীষ্মের ছুটিতে জাপানে যাওয়া এবং সন্তান দুটির বাবা ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।