যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন ‘বড়দিন’ উৎসব পালন নিয়ে দেশে কোনো হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
রোববার হতে যাওয়া বড়দিন উৎসব উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাকরাইল চার্চে এ কথা জানান তিনি।
আইজিপি বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট (হুমকি) নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনারা জানেন হলি আর্টিজান ঘটনার পরে এ দেশে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ঘটনা নেই।’
দেশবাসীকে বড় দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উৎসব আজ থেকে শুরু হয়েছে। এই উৎসব উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে নিয়জিত রয়েছে।
‘সারাদেশে বড় দিনের আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রতিটি ভেন্যু ও এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা উৎসবমুখর পরিবেশে আপনাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।’
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা জানি এই দেশে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এক সঙ্গে বসবাস করি। মুসলমান, হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে হয়ে থাকে, তেমনিভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের অনুষ্ঠান একইভাবে পালন হয়ে থাকে। তাদের উৎসবেও যেকোনো সহযোগিতা নিয়ে আমরা পাশে দাঁড়াবো।’
দুই জঙ্গি পালাতক আছে এ কারণে আপনারা কোন শঙ্কায় আছেন কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুই জঙ্গি পালিয়েছে। তারা কেনো পালিয়েছে সেটা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি জানা যাবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তবে এটা নিয়ে সঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের কাছে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। যেখানে, যে অবস্থায়, যে পরিস্থিতিতে, যেমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা সেটাই নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। একটা ঘটনা ঘটেছে (দুই জঙ্গি পালানো) সে জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন আমরা সেটা নিচ্ছি। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।’
পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহাধর্ম প্রদেশের চ্যান্সেলর ফাদার মিল্টন ডেনিস কোড়াইয়া।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমরা অত্যন্ত খুশি। বড়দিনের আগে থেকে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা আশা করি এবারের বড় দিনের উৎসব ভালোভাবে আমরা পালন করতে পারবো।’
অনুষ্ঠান সূচি নিয়ে ফাদার মিল্টন বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৮টার মধ্য দিয়ে বড় দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, এরপর রাত সাড়ে ১১টা ও আগামীকাল রোববার সকাল ৮টায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন রয়েছে।’
র্যাবের নিরাপত্তা
বড়দিন উপলক্ষে দেশের চার্চ ও আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করেছে র্যাব। পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য নিয়োজিত করার পাশাপাশি চেকপোস্টও বাড়িয়েছে বাহিনীটি।
যে কোনো অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বড়দিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে যে কোনো ধরনের অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, র্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত, চার্চগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র্যাবের স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, ফুট ও মোবাইল পেট্রোল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, চেকপোস্ট, সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ঠেকাতে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাবের চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হবে।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাইবার পেট্রোলিংও করছে র্যাব। তারা বলছে, অনলাইনে মিথ্যা অপপ্রচার ও গুজব ঠেকাতে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টীমের সার্বক্ষনিক নজরদারিঅব্যাহত রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্স টিম, র্যাবের হেলিকপ্টার, ডগ স্কোয়াড, ও বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।