কেন্দ্র ঘোষিত মিছিল কর্মসূচি ঘিরে খুলনা মহানগরীর ডি কে ঘোষ রোডে বিএনপির কার্যালয়ের সংলগ্ন এলাকাগুলোতে ব্যারিকেডসহ জলকামান ও রায়টকার মোতায়েন করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে এসব প্রতিবন্ধকতা কোনো কাজে আসেনি বলে জানান দলটির নেতারা। কার্যালয়ের সামনে একটি সমাবেশের পর কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই মিছিল করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এর আগে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য মিছিলপূর্ব সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জোয়ার বইছে- আওয়ামী লীগের এই দাবি সত্য হলে অবাধ নির্বাচনের মধ্যমে ভোট করতে সরকারের বাধা কোথায়?’
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার বিকেলে নগরীতে ওই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল থেকে বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দাবি করা হয়।
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, ‘আপনাদের ইতিহাসের কিছু সত্য জানাতে এখানে এসেছি। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় থাকতে একটি নির্বাচন দিই। এরপর আর একটি নির্বাচন হয়, যার আগে পল্টনে এমন একটি সমাবেশ থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। জনগণের জন্য রাজনীতি করে। ক্ষমতাকে তুচ্ছ করে দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন।’
এমন আরেকটি নজির স্থাপনের জন্য তিনি বর্তমান সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান।
মিছিলের আগে একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন ড. মঈন থান
ড. মঈন খান বলেন, ‘দুটি মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। একটি গণতন্ত্র, অন্যটি অর্থনৈতিক মুক্তি। আজ দেশে অলিখিত একদলীয় শাসন চলছে। ১৭ কোটি মানুষ তাদের সব অধিকার হারিয়েছে। পাকিস্তান আমলে ২০টি পরিবার দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল। আজ দুই শ পরিবার দেশের সব সম্পদ লুটে বিদেশে পাচার করছে। বেগমপাড়া তৈরি করছে। তাহলে '৭১-এ আমরা কেন যুদ্ধ করেছিলাম!’
খুলনা মহাগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ও খান রবিউল ইসলাম রবি।
মহানগর সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা সদস্যসচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন তারিকুল ইসলাম জহির, আবু হোসেন বাবু, খান জুলফিকার আলী জুলু, স ম আব্দুর রহমান, সাইফুর রহমান মিন্টু, সৈয়দা রেহানা ঈসাসহ অন্যান্য নেতা।
সমাবেশ শেষে এক মিছিল থানার মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের পর কেসিসি মার্কেট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপি কার্যালয় এবং সংলগ্ন এলাকা, সোসাইটি মোড়, কেসিসি মার্কেট, ডাকবাংলা, ফেরিঘাট মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব মোড় ও পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। একই সঙ্গে মোতায়েন ছিল রায়ট কার ও জলকামান।
খুলনা মহানগহর বিএনপির সদস্য এহতেশামুল হক শাওন বলেন, ‘বিকেল ৩টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আমাদের গণমিছিল শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে আমাদের মিছিল বানচাল করতে সকাল থেকেই নগরীর ফেরিঘাট মোড়ে জলকামান প্রস্তুত রাখে মেট্রোপলিটন পুলিশ। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
‘তবে নির্ধারিত সময়েই নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানা থেকে একের পর এক বিশাল মিছিল সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছাতে থাকলে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রতিরোধের কোনো উপায় খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
এর আগে খুলনা নগরীতে মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরও। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে নগরীর গল্লামারী প্রধান সড়কে এ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলের আগে একটি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।