বিঘা বিঘা জমিতে লেবুর বাগান। সেখানে উৎপাদিত লেবু বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। আবার বাগানের লেবুগাছ থেকেই কলম করে উৎপাদন হচ্ছে চারা।
এমন দৃশ্য দেখা যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামে।
ওই গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবুর চাষ করে অন্যদের পথ দেখাচ্ছেন মোবাশ্বের ইমরান। তিনিসহ অন্য বাগানিদের সঙ্গে কলম করে চারা উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে কিশোর তিন বন্ধু, যারা এ কাজে দক্ষ হয়েছে ইউটিউবে ভিডিও দেখে।
তিন কিশোর হলো স্কুলছাত্র আশিক ইসলাম ও মোমিন আলী এবং এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তিচ্ছু রিপন ইসলাম। আকচা মুন্সিপাড়ায় কারও চারা উৎপাদনের দরকার হলে সবার আগে ডাক পড়ে তাদের।
কী বলছে তিন বন্ধু
লেবুগাছ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা তিন কিশোরের একজন মোমিন আলী জানায়, অভাবে লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয়, সে জন্য নিজেকে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি আয়ের উৎস হিসেবে বাগানে কাজ শুরু।
সে আরও জানায়, গ্রামে গড়ে ওঠা লেবুর বাগানগুলোতে বহিরাগতরাও কাজ করে। এ থেকে তার মনে হয়, কয়েক ঘণ্টা কাজ করে জোগাড় করা যাবে লেখাপড়ার খরচ। সে চিন্তা থেকে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে চারা উৎপাদন শেখে তারা।
গত বছর থেকে চারা উৎপাদন করছে তিন কিশোর। দিনে চার ঘণ্টা কাজ করে জনপ্রতি তাদের আয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
আরেক বন্ধু আশিক আলী বলে, ‘গ্রামে কৃষি আবাদ হয়, কিন্তু আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমাদের প্রশিক্ষণ নেই। ভবিষ্যতে যেন কৃষিকাজে উদ্যোক্তা হতে পারি, সে জন্য নিজেদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমরা ইউটিউবের সাহায্য নিই।
‘অযথা কোথাও আড্ডা মেরে সময় নষ্ট না করে সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এতে আমাদের কিছু আয় এবং অনেক অভিজ্ঞতাও হয়।’
রিপন ইসলাম জানায়, লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তার পরিবারকে। এ থেকে উত্তরণে দুই বন্ধুকে নিয়ে ইউটিউবে শুধু চারা উৎপাদন নয়, আধুনিক কৃষিকাজের সব ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছে সে। গ্রামে যেসব চাষাবাদ হয়, সেসবে নিজেদের সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়াই তাদের লক্ষ্য।
উদ্যোক্তা ও কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য
আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মোবাশ্বের ইমরান জানান, গ্রামে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে লেবুর চাষ শুরু করেন। তিনি আড়াই বিঘা জমিতে লেবুর বাগান করেছেন। গত দুই বছরে লেবু চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। বছর শেষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, আধুনিক কৃষির প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা পেলে গ্রামের তরুণরা কৃষিকাজে আরও ভালো করবে; তৈরি হবে অনেক উদ্যোক্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল আজিজ বলেন, ‘লেবুজাতীয় ফল, যেমন: মাল্টা, কমলার হিসাব রাখা হয়। শুধু লেবু কী পরিমাণ উৎপাদন হয়, তার হিসাব নেই আমাদের কাছে।
‘যেহেতু জেলাতে লেবুর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে, আমরা এর সঠিক হিসাব নিয়ে আসব এবং চাষি ও উদ্যোক্তা যারা আছেন, তাদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করব।’