কারাগারে আটক এক বিএনপি নেতাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিলেও তাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার সমালোচনা করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বলেছেন, এই ছবি দেখে লজ্জা পেয়েছে দেশবাসী, লজ্জা পেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজমের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এই আলী আজমকেই ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় আনে পুলিশ।
গয়েশ্বর বলেন, ‘ডান্ডাবেড়ির কারণে মায়ের মরদেহ কবরে নামাতে না পারা অমানবিক। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই সরকার একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যা দেশ-বিদেশে নিন্দনীয় হচ্ছে।’
গত ২ ডিসেম্বর আলী আজমকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর তার মা সাহেরা বেগম মারা যান। ২০ ডিসেম্বর আলী আজম প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকরা ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজার নামাজ পড়ান। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এমনকি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও বলেছেন, এটি উচিত হয়নি। জানাজার সময় ডান্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে গাজীপুরের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজে কথা বলেছেন।
বিএনপি নেতা আলী আজমের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবি: নিউজবাংলা
গয়েশ্বর বলেন, ‘হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে আলী আজমকে মায়ের জানাজা পড়াতে হয়েছে। এ ঘটনায় দেশের জনগণ হিসেবে আমরা লজ্জা পাচ্ছি। এর জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, বাংলাদেশের জনগণ দায়ী নয়, দায়ী ফ্যাসিবাদী সরকার।’
আলী আজমের ছোট ভাই আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা তার হাতকড়া এবং পায়ের ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম পুলিশকে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথা রাখেনি। দাফন শেষ না হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে ভাইকে আরেকটু সময় থাকার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চাইলেও দেয়া হয়নি। পানি খেতে চাইলেও তাকে সে সুযোগও দেয়নি পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। সে ঘটনার সময় ওই স্থানে ছিল না। রাজনৈতিক জীবনে ভাইয়ের এটাই প্রথম জেলে যাওয়া।’
কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘আলী আজম খানকে পুলিশ যে মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ওই মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল সালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সফিকুল ইসলাম আকন্দ, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানসহ দলের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতারা বিএনপি নেতার মায়ের কবর জিয়ারত করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন।