বিএনপি ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ যে ২৭ দফার রূপরেখা দিয়েছে, তাকে হাফ হার্টেড বা অসম্পূর্ণ বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি মনে করেন ওই রূপরেখা নিয়ে আরও কাজ করা প্রয়োজন।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ নামে একটি সংগঠনের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ২৭ দফা নিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তারা ২৭ দফা করেছে ভালো। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এটা হাফ হার্টেড। এটাতে তাদের আরও বেশি কাজ করার দরকার আছে।’
গত সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। এতে বেকার ভাতা চালু, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারণ, শ্রমজীবীদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার মতো উদ্যোগের কথা বলা আছে।
এতে সেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রপতির মতো প্রধানমন্ত্রী পদেও পরপর দুইবারের বেশি নয়- এমন একটি বিধান সংযোজন, অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও দায়ীদের মধ্যে সমঝোতা করতে একটি কমিশন গঠনের কথাও আছে এতে।
এতে বলা হয়েছে, “প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ (বহু বর্ণ-ধর্ম মিলিয়ে জাতি) প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য করা হবে একটি ‘জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন’।”
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এই রিকনসিলিয়শন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, এর মাধ্যম বিএনপি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাবিরোধীদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
বিএনপির ২৭ দফা প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে আমরা কথা বলতে পারি না, মিছিল করতে পারি না। করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। পুলিশ অনুমতি দেয়ার কে? মিছিল সমাবেশে বাধা দেয়া হবে না এটিও দফাতে উল্লেখ রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে স্মরণ রাখতে হবে মালয়েশিয়ার কথা। মালয়েশিয়াতে আনোয়ার (মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম) রিলেটেড ছোট ছোট পার্টি প্রত্যেকে নির্বাচিত হয়েছে। বিএনপিকে যদি বড় কাজ করতে হয়, তাদের ২৭ দফাকে রূপদান করতে হলে আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিতে হবে। আর এখনই ঘোষণা করতে হবে, প্রত্যেকটা দল থেকে আপনাদেরকে তারা দু-চারটা করে এমপি...। তাহলে শত ফুল ফুটবে। শত ফুল ফুটলেই বিকশিত হয় জাতি।
‘একলা খাবে এটা হতে পারে না। আর কেউ খাবে কেউ খাবে না এটা হতে পারে না। সবাইকে অংশীদার করতে হবে।’
দেশে গণতন্ত্র নেই অভিযোগ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘১৫ দিনে ২৪ হাজার বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলো। এটি একটি ফ্যাসিবাদী নমুনা।
‘আজকে অনেক আওয়ামী লীগার বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর কথা বলেন এবং বইটি বিলিও করেন। কিন্তু বইতে বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ লিপিবদ্ধ আছে তা আওয়ামী লীগের নেতারা বাস্তবায়ন করেন? তারই কন্যা আজ আইনকে নির্বোধ বানিয়ে অপব্যবহার করছেন।’
তিনি বলেন, ‘হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদন্ডাদেশ থাকলেও তাকে জামিন দেয়া হয়। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বয়োজ্যেষ্ঠ খালেদা জিয়ার জামিন হয় না।
‘হাইকোর্টের বিচারপতিগণও আজ মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছে। আজকে সবাই সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে না পারলেএ বৈষম্য থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।’
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী জাফরুল্লাহর কাছে ফুল দিয়ে ভাসানী অনুসারী পরিষদে যোগ দেন।