বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডানা ভাঙা শঙ্খচিলের বন্ধু মতিন সৈকত

  •    
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:১২

শত সহস্র ডানা ভাঙা কিংবা ফাঁদে পড়া পাখিকে উদ্ধার করে আকাশে মুক্ত করেছেন মতিন সৈকত। ৩০ বছর ধরে ১৫০০-এর বেশি আহত পাখির পরিচর্যা করেছেন তিনি।

বছর দেড়েক আগে কড়ইগাছের মগডালে বাসা বেঁধেছিল এক জোড়া শঙ্খচিল। ঘাস, লতাপাতা ও গাছের শুকনা ডালে তৈরি বাসায় ডিম পাড়ে স্ত্রী শঙ্খচিল। কিছু দিন পর দুটি ডিম থেকে ফুটফুটে ছানা বের হয়।

চারপাশে প্লাবন ভূমি। শঙ্খ জোড়া সারা দিন সেখান থেকে মাছ-ইঁদুর পোকা-মাকড় এনে ছানাদের মুখে তুলে দেয়। এক দিন ডানা ঝাপটাতে গিয়ে বাসা থেকে ছিটকে পড়ে একটি শঙ্খ ছানা। মাটিতে পড়ে ডানা ভেঙে যায় শঙ্খ ছানাটির। পরে শঙ্খটিকে কুড়িয়ে এনে বাড়িতে লালন-পালন শুরু করেন মতিন সৈকত।

পেশায় শিক্ষক মতিন সৈকত একজন পরিবেশ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামে। ডানা ভাঙা শঙ্খচিলটি এখন তার বাড়িতে। প্রতিদিন নিয়ম করে শঙ্খচিলটিকে খাবার খাওয়ান। একটি ডানা ভাঙা। তাই দিনভর মন খারাপ করে আকাশে উড়তে থাকা অন্য চিলের দিকে তাকিয়ে থাকে শঙ্খটি। মাঝে মাঝে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ডেকে ওঠে।

এমন শতসহস্র ডানা ভাঙা কিংবা ফাঁদে পড়া পাখিকে উদ্ধার করে আকাশে মুক্ত করেছেন মতিন সৈকত। মতিন সৈকত জানান, দাউদকান্দিজুড়ে প্লাবনভূমি। এখানে কৃষি ও মাছ উৎপাদনে সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা। ২০০৬ সাল থেকে পাখি উদ্ধার, পরিচর্যা ও অবমুক্ত করে আসছেন তিনি। তার উদ্ধারকৃত পাখির সংখ্যা ১৫০০-এর বেশি।

শঙ্খচিল ছানার সঙ্গে পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি অনেক বন্যপ্রাণীও উদ্ধার ও অবমুক্ত করেন। তার ৩০ বছরের প্রচেষ্টায় সরকার কালাডুমুর নদী পুনঃখনন করে দিয়েছেন। সড়ক-মহাসড়ক, শহর-নগরের ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য থেকে সিটিজেন ফার্টিলাইজার বা নাগরিক সার রূপান্তর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য তিনি সরকার এবং উন্নয়ন সংস্থার কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তার যৌথ উদ্যোগে সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভর হচ্ছে।

মতিন সৈকত বাংলাদেশ পরিবেশ স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। নার্সারি স্থাপন এবং বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি পাখি ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য গড়ার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করছেন তিনি। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকসহ জাতীয় পরিবেশ পদকে ভূষিত করেছেন তাকে।

দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, ‘মতিন সৈকত শুধু পাখি উদ্ধারই নয়, কুমিল্লা জেলায় বিষমুক্ত কৃষি ফসল উৎপাদনের পথিকৃত। এখন ঢোল পিটিয়ে কৃষকদের জড়ো করে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেন। নিঃসন্দেহে মতিন সৈকতের এমন কাজ আমাদের সবার কাছে অনুসরণীয়।’

মতিন সৈকত বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমার এসব কাজে সবাই আমাকে পাগল ভাবত। এখন সবাই আমার কাজে উৎসাহ দেয়। কোথাও কোনো পাখি আহত হলে কিংবা জালে আটকালে আমার কাছে খবর নিয়ে আসে। আমি সেখানে ছুটে যাই। পাখি উদ্ধার করি। বাড়িতে এনে সেবা দেই। এসব কাজে আমার মনে আনন্দ হয়। মুক্ত আকাশে পাখি ওড়ার দৃশ্য আমাকে সুখী করে। কৃষক, ফুল, ফল ও পাখিদের নিয়ে বাকি জীবনটা পার করতে চাই।’

কুমিল্লার মতিন সৈকত ঠিক যেন আলী ইমামের রচিত পাখিদের নিয়ে গল্পের জগরু মিয়া। যেখানেই কোনো পাখি জালে আটকায় কিংবা কোনো ফাঁদে পড়ে, সেখানেই তিনি চলে যান। পাখিটিকে বাসায় এনে সুস্থ করে আকাশে মুক্ত করে দেন। আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখির দৃশ্য দেখলে তার মনটা ভালো যায়।

এ বিভাগের আরো খবর