ময়মনসিংহে নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনীতে সয়লাব বাজার। বিভিন্ন দোকানে সুদৃশ্য মোড়কে প্রসাধনী বিক্রি করলেও মোড়কে থাকে না খুচরা বিক্রয়মূল্য। দোকানিরা পণ্যের গায়ে কোড নম্বর বসিয়ে ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন। ফলে অনেক ক্রেতা না বুঝে এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
পরিচয় গোপন রেখে শহরের বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে এর প্রমাণ পেয়েছে নিউজবাংলা। শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকায় ‘ইদানিং প্রসাধনী’ নামের একটি দোকানে চাওয়া হয় শিশুদের ভালো মানের বডি ওয়াশ। এ সময় দোকানি কডোমো নামের পণ্যটির দাম ৩৫০ টাকা দিতে বলেন। পণ্যের গায়ে বিক্রয়মূল্য কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর সাজানো ছিল আগে থেকেই।
দোকানি বলেন, ‘ওই যে পেছনে ০৩৩০৪ কোড নম্বর দেয়া আছে।’ কোড নম্বর কেন? বিক্রয়মূল্য কোথায়? এমন প্রশ্নের সোজা উত্তর, ‘আপনারা বুঝবেন না। আমরা কোড নম্বর দেখেই বিক্রি করি। তারা (কোম্পানি) মূল্য লিখে দেয় না।’
একপর্যায়ে পরিচয় পেয়ে সব খুলে বলেন এই বিক্রেতা। জানান, এটি অপরাধ। তবুও অনেকে এভাবেই বিক্রি করছেন বলে তিনিও নিজ হাতে কোড নম্বর লিখে বিক্রি করছেন।
এরপর একই এলাকার আরেকটি দোকানে গিয়েও একই পণ্য চাওয়া হলে তিনিও কোড নম্বর লেখা পণ্যটি বের করে দেন। খুচরা বিক্রয়মূল্য আছে এমন বডি ওয়াশ আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে মূল্য লেখা আছে এমন পণ্যও দেখানো হয়। কোড লেখা আর না লেখা নিয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি দোকানি।
পণ্যের গায়ে দাম লেখা নেই। কোড দেখে দাম হাঁকছেন বিক্রেতা। ছবি: নিউজবাংলা
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে জানান, নামি-দামি দেশীয় ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য নকল করে ডিলারদের মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী জেনে ও অনেকে না জেনেও ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল পণ্য দেশে তৈরি করে বিদেশি বলে বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মানহীন, অনুমোদনহীন ফেস ক্রিম ও ত্বক ফরসাকারী ক্রিম।
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে আমদানি করা অনেক পণ্য ঢাকার চকবাজার থেকে চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বডি লোশন, শ্যাম্পু, শেভিং ক্রিম ছাড়াও নারীদের দেশি-বিদেশি নানা ধরনের প্রসাধনী।’
এ সময় কথা হয় নাজমা খাতুন নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ত্বক ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনে এক সপ্তাহ পরই যথেষ্ট ফর্সা হয়েছিল। কিন্তু ১৫ দিন পর থেকেই মুখে ব্রন হওয়া শুরু করে। পরে বুঝতে পেরেছি মানহীন পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া উকুন মারার শ্যাম্পু যথাযথ নিয়মে ব্যবহার করেও ফলাফল শূন্য।’
তিনি বলেন, ‘নকল পণ্যগুলো দোকানে লুকিয়ে রাখেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা অনুসারে এগুলো বিক্রি করা হয়। কোনটা আসল আর কোনটা নকল আমরা বুঝতে পারি না। প্রসাধনীর সব দোকানে প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি বিভিন্ন পণ্য লাগেজের মাধ্যমে এ দেশে আনা হয়। ফলে দোকানিরা নিজেরাই মূল্য লিখে বিক্রি করেন। এ ছাড়া চোরাকারবারি চক্র বিভিন্ন পণ্য নেত্রকোনার দুর্গাপুর বর্ডার দিয়ে ময়মনসিংহে এনে বিক্রি করে।’
পণ্যের গায়ে খুচরা বিক্রয়মূল্য নেই, কোড নম্বর লিখে বিক্রি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটাও অপরাধ। দোকানিরা বেশি লাভের আশায় নানাভাবে পণ্য বিক্রি করছেন। জেলার প্রসাধনীর দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হবে।’