জঙ্গিবাদে ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহর সম্পৃক্ততার কথা জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান শুরু থেকেই জানতেন বলে রিমান্ডের সময় জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির কাছে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার হয়ে কয়েকজন যুবককে নিয়ে ‘হিজরতের জন্য’ বান্দরবান পাহাড়ে যেতে ব্যর্থ হলে শফিকুর রহমান তার ছেলেসহ অন্যদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।
জামায়াত আমিরের ছেলে চিকিৎসক রাফাত চৌধুরীকে ৯ নভেম্বর সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তখন জানানো হয়, তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক। পরে জানানো হয়, এই সংগঠনের কর্মীদের একটি বড় অংশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত। জামায়াত থেকেও হিন্দাল শারক্বীয়া সাহায্য সহযোগিতা পায়।
ছেলেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় যে মামলা হয়েছিল, তাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয় জামায়াতের আমিরকেও। পরে ১৩ ডিসেম্বর সাত দিনের রিমান্ডে পায় সিটিটিসি।
সেই রিমান্ডে জিজ্ঞাসবাদে কী পাওয়া গেল, তা জানতেই এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসাদুজ্জামান। অবশ্য জামায়াত আমির এখনও দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে আছেন।
সিটিটিসিপ্রধান বলেন, ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন, সেটি জানতেন শফিকুর। এরপরও তিনি নীরব ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানাননি।
জঙ্গিবাদে জামায়াতের আমিরের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্যপ্রমাণ মিলেছে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, আপনার ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে, আপনি সেটা জানতেন, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাচ্ছেন না, সেটিও কিন্তু অপরাধ।
‘তার ছেলে হিজরত করেছে, তার ছেলে একটা গ্রুপসহ বান্দরবানের পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা করেছে। কিন্তু যেতে না পেরে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তাকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা তিনি করেছেন। এটা সন্ত্রাসবাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা।’
অনেককেই জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসার সুযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। জামায়াতের আমিরের ছেলের ক্ষেত্রে আপনারা তেমন কিছু করবেন কি না, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মনে করে এই ছেলে জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, পরিবার আবেদন করে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া যেত।
‘কিন্তু তার বাবা শফিকুর রহমানই তো জানতেন ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন। কিন্তু তিনি বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি বরং আরও সহযোগিতা করেছেন। পুরো বিষয়টি তিনি গোপন করেছিলেন। এমন সব ঘটনার পর জঙ্গিবাদ থেকে ফেরা বা ফেরানোর সদিচ্ছা প্রমাণিত হয় না।’