মিয়ানমারে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমার পরিস্থিতি’ বিষয়ক রেজল্যুশন গৃহীত হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানসহ বাংলাদেশ থেকে তাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
তবে এবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভারত, চীন ও রাশিয়া ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলেও ভেটো দেয়নি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজল্যুশনটির ওপর ভোট আহ্বান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভোটাভুটি পর্বে এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোনো সদস্য ভোট অথবা ভেটো দেয়নি।
রেজল্যুশনটির পেন হোল্ডার (মূল স্পনসর) পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। তিন মাস ধরে রেজল্যুশনটির নেগোশিয়েশন শেষে এটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন রেজল্যুশনটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়েছে।
এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একই সঙ্গে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এ-সংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত করবে। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন রেজল্যুশনটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে রেজল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভোটদান শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন ও নরওয়ে তাদের বক্তব্যে রেজল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণের প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্র রেজল্যুশনটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানায়। এই রেজল্যুশনটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালী সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত রেজল্যুশনটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
রেজল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিমিত্ত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায়।
মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কি না, সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতকে ২০২৩-এর ১৫ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ এ পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসনের জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন।