বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুদ্ধ চাই না, তবে সমরে যেন জিততে পারি: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:৩০

‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই চলব। তবে আমরা একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে। যদি কখনও খোদা না করুক, বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তাহলে যেন আমরা তা প্রতিহত করতে পারি। আর যেকোনো যুদ্ধে যেন জয়ী হতে পারি।’

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তিন বাহিনীর সদস্যদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কারও সঙ্গে যুদ্ধ করবে না বাংলাদেশ, তবে যদি কখনও যুদ্ধে জড়ায় তাহলে যেন জিততে পারে।

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মিডশিপম্যান হিসেবে কমিশন পাওয়া নৌবাহিনীর ৪১ তরুণ কর্মকর্তাকে অভিনন্দন জানান সরকারপ্রধান। দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রিয় নবীন অফিসারবৃন্দ। আজ ৪১ জন তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপনারাই আমাদের নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ কান্ডারি। সততা, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’

যুদ্ধের ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে গেছেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই চলব।

‘তবে আমরা একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে। যদি কখনও খোদা না করুক, বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তাহলে যেন আমরা তা প্রতিহত করতে পারি। আর যেকোনো যুদ্ধে যেন জয়ী হতে পারি।’

নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে কী কী করেছে সরকার

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা '৯৬ সাল থেকেই নৌবাহিনীকে আধুনিক করার কাজ করি। ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। মোট ৩৬টি যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীতে যুক্ত করি।

‘দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল হিসেবে স্পেশাল ওয়ারক্রাফট ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড এবং নৌবাহিনীর অ্যাভয়েশন উইং আমরা প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৭ সালে দুটি সাবমেরিনও সংযোজন করা হয়। এর ফলে আমাদের নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই ছিলো নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক করা। তাই ১৯৯৬ সাল থেকেই নৌবাহিনীকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিই। সেই সময়েই আমরা আধুনিক যুদ্ধজাহাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করি।

‘১৯৭৪ সালে জাতির পিতা যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা করেছিলেন তার ভিত্তিতে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। নৌবাহিনীতে গত ১৪ বছরে ৪টি ফ্রিগেট, ৬টি কর্বেট, ৪টি প্যাট্রোল ক্রাফটসহ মোট ৩১টি যুদ্ধজাহাজ সংযোজন করি।’

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরা যাতে নিজেদের জাহাজ নির্মাণ করতে পারি, এ জন্য খুলনা শিপওয়ার্ড এবং চট্টগ্রামের ড্রাইডক, আমরা নৌবাহিনীর কাছে দায়িত্ব দিই। সামনে আরও কিছু নতুন জিনিস আমরা সংযোজন করব।

‘দুটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট, দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার সংযোজন করা হবে। নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপওয়ার্ডে তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাংক নির্মাণের জন্য কাজ চলছে। যুদ্ধজাহাজ, আধুনিক ও অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি নৌবাহিনীতে প্রতিনিয়ত সংযুক্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনী চট্টগ্রাম, মংলা বন্দরসহ সমুদ্র ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, বোট ও ব্লু ইকোনমি সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তাও দিচ্ছে। নৌবাহিনীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটেছে।

‘এভাবেই আমাদের তিন বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, আধুনিক সরঞ্জাম দিয়েই আমি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা প্রশিক্ষণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। প্রশিক্ষণের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নও আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা করে দিয়েছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের নৌবাহিনী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। শান্তির সংস্কৃতি আমরা যেটা উত্থাপন করেছিলাম তা পাস হয়েছে। সেখানে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় আমাদের নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’

‘ক্রেতা বাহিনী থেকে নির্মাতা বাহিনী’

নিজেদের জাহাজ নিজেরাই নির্মাণ করার মাধ্যমে নৌবাহিনী ক্রেতা বাহিনী থেকে নির্মাতা বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল যেখান থেকে সমুদ্র অনেক কাছে, সেখানে আমাদের কোনো নৌ ঘাঁটি ছিল না। সেখানে আমাদের শেরেবাংলা নৌ ঘাঁটি নির্মাণকাজও এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রামের পেকুয়াতে আমাদের সাবমেরিন রাখার জন্যও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

‘আমাদের শিপ ইয়ার্ডে আমরা নিজেদের জাহাজ নিজেরাই তৈরি করছি। যেমন ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট, দুটি লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট নির্মাণ প্রায় শেষ। আরও ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট নির্মাণের কাজ চলছে।

‘এতে বৈদেশিক মুদ্রার যেমন সাশ্রয় হচ্ছে, দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশও হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এবং আমাদের দেশের মানুষও দক্ষতা অর্জন করতে পারছে।’

সর্বদা দেশের মানুষের পাশে

নৌবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ দেশ আমাদের। সেখানে আমাদের নৌবাহিনী সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। উদ্ধারকাজ থেকে শুরু করে ঋণ দেয়া, সব কাজ খুব দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে।

‘কাজেই আমি চাই, আমাদের নবীন অফিসাররাও এভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। সব সময় সুশৃঙ্খল থাকতে হবে, শৃঙ্খলাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠাকে পাশে রেখেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে যে টানেল হচ্ছে, তার নিরাপত্তার দায়িত্বটা পুরোপুরি নৌবাহিনীর হাতে দেয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কারণ, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বলে আমি মনে করি। আর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এ ধরনের একটি টানেল নির্মাণ হচ্ছে। এটার সুরক্ষা একান্তভাবে অপরিহার্য।

‘আমরা গৃহহীন ভূমিহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। আমার মনে আছে আমরা সর্বপ্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন এটা কিন্তু নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিন দ্বীপে শুরু করেছিল। আজকে এটা সারা বাংলাদেশে আমরা তাদের জন্য ঘর করে দিচ্ছি। কাজেই এ জন্য আমি নৌবাহিনীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই।’

নতুন কমিশন পাওয়া নৌবাহিনীর তরুণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীর আপনারাই কান্ডারি। স্বাধীনতা রক্ষা ও দুর্যোগ রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি চাই নবীন অফিসাররা এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে। সব সময় সুশৃঙ্খল থাকতে হবে।’

‘আপনারা আপনাদের সন্তানদের দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োগ দিয়েছেন। ছেলেমেয়ে সকলেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। কাজেই আজ তারা কমিশন পেয়েছে, আমি আপনাদেরও অভিনন্দন জানাই।’

এ বিভাগের আরো খবর