বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লালি ব্যবসায় দুর্দিন

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:৪৬

বিষ্ণুপুর গ্রামের সহিদ আকবর জানান, প্রতি বছরই লালি তৈরিতে খরচ বাড়ছে কৃষকদের। এবারের মৌসুমে আখ কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজে একজন শ্রমিককে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে, যা গেল বছর ছিল ৪০০ টাকা।

প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কর্মযজ্ঞ। প্রথমেই চলে মহিষ দিয়ে আখ মাড়াই। মাড়াই শেষে রস সংগ্রহ করে ছাঁকনিতে ছেঁকে তা রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরের দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয় রস। এরপর সেই রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামে শীতের মৌসুমে চলে এই কর্মযজ্ঞ। এখানে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু আখের তরল গুড়, যা স্থানীয় ভাষায় ‘লালি’ নামে পরিচিত। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিজয়নগরের কয়েকটি গ্রামে আখ থেকে লালি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করে শতাধিক কৃষক পরিবার। কৃষিকাজের পাশাপাশি বছরে তিন মাস লালি উৎপাদন করেন তারা।

বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর গ্রামের লালি উৎপাদনকারী রুক্কু মিয়া জানান, সারা দেশেই কদর বাড়ছে এই গুড়ের। প্রতি কেজি খুচরা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

শীতের মৌসুমে এই লালি রুটি, পিঠা ও মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

আখের রস জ্বাল দিচ্ছেন এক কৃষক। ছবি: নিউজবাংলা

বিষ্ণুপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুধু বিজয়নগর থেকে নয়, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই গুড় কিনতে এসেছেন অনেকে।

তারা জানান, এখানকার লালিতে কোনো কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয় না। এটা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত। তাই প্রতি বছরই তারা শীতের সময় লালি কিনতে আসেন।

লালি কিনতে আসা বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা তমিজ উদ্দিন চৌধুরী জানান, সকালের নাশতায় লালি খুব ভালো লাগে। প্রতি বছরই শীতে লালির অপেক্ষায় থাকি। সুস্বাদু এই গুড় বাড়ির সবাই পছন্দ করে।

এ বছর ১০০ টনের মতো তরল গুড় উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। তাই এ বছর ১ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের লালি বিক্রির আশা এই বিভাগের।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হচ্ছে। আর এই ২৫ হেক্টর জমির আখ লালি তৈরির কাজে লাগানো হলে এ বছর প্রায় ১০০ টন গুড়ের এই লালি তৈরা হবে।

শীতে চাহিদা বাড়ে আভের লালির। ছবি: নিউজবাংলা

তবে গেল বছর লালি বিক্রি হয়েছিল ২ কোটি টাকারও বেশি। মূলত উৎপাদনে খরচ বাড়ায় লালির উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিষ্ণুপুর গ্রামে লালি তৈরি করে বিক্রি করেন সহিদ আকবর। তিনি জানান, প্রতি বছরই লালি তৈরিতে খরচ বাড়ছে কৃষকদের। এবারের মৌসুমে আখ কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজে একজন শ্রমিককে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে, যা গেল বছর ছিল ৪০০ টাকা। এ ছাড়া ঘানি টানানোর জন্য আগে যে মহিষ ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় কেনা গেছে, তা এবার ৩০-৪০ হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে।

ফলে খরচের তুলনায় লালি ব্যবসা লাভজনক না হওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছেন তারা।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এখন লালি তৈরি হচ্ছে বিজয়নগরে। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আখ চাষ আরও বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর