সুলতান মিয়া সারা বছর পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন, তবে শীত এলেই বেড়ে যায় তার ব্যস্ততা। তার বিক্রিও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
সুলতান ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌর এলাকার বাসিন্দা। তিনি বাহারি রকমের পিঠা বিক্রি করেন ত্রিশালের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে। প্রতিদিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ডিম চিতই, পাটিসাপটাসহ নানা পিঠা বিক্রির ধুম।
ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্র্যের কশাঘাতে পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি, কিন্তু সন্তানদের শিক্ষিত করার মনোবাসনা ছিল তার সব সময়। সেই স্বপ্নপূরণে পিঠা বিক্রি করে সন্তানদের করাচ্ছেন পড়াশোনা।
সুলতানের পিঠার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সন্ধ্যায় পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেছেন বিভিন্ন বয়সের লোকজন। পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত এ বিক্রেতা। পিঠা খেতে কেউ দোকানের ভেতরে বেঞ্চে বসে আছেন, আবার কেউ লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন।
পিঠার সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য আছে রসুন-মরিচবাটা, ধনেপাতা বাটা, শুঁটকি, কালিজিরা ও সরষে ভর্তা।
স্থানীয় কাদির মিয়া এসেছেন সুলতানের দোকানে পিঠা খেতে। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে মাঝেমধ্যে পিঠা বানানো হয়, তবে ফুটপাতসহ হাটবাজারের দোকানে চুলার পাশে বসে গরম পিঠা খেতে বেশি ভালো লাগে। খাওয়া শেষে মাঝেমধ্যে পরিবারের জন্যও পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যাই।’
পিঠা খেতে আসা মামুনুর রশিদ জানান, শুধু পৌর এলাকায়ই অর্ধশত পিঠা বানানোর ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি দোকান উপজেলার বাসস্ট্যান্ড, গোহাটা মোড়, পোড়াবাড়ী রোড, পৌরসভা অফিসসংলগ্ন স্থানে। এসব দোকানে চিতই পিঠা ৫ টাকা, নকশি পিঠা ১০ টাকা, ডিম চিতই পিঠা ২০ টাকা ও ভাপা পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
পিঠা বিক্রেতা সুলতান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে বড় হয়েছি। আগে নানা কষ্টে কাজ করেছি, কিন্তু পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে পারছিলাম না। শীতকালে দেখতাম বিভিন্ন হাটবাজারসহ অলিগলিতে পিঠা বিক্রির ধুম৷ ১৫ বছর আগে কিছু জমানো টাকা দিয়ে পিঠা বিক্রি শুরু করি, যা এখনও চলছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে শুধু শীতের সময় পিঠা বিক্রি করেন। শীত চলে গেলে অন্য কাজ করেন। কারণ শীতের সময় পিঠা বিক্রিতে বেশি লাভ হয়। কিন্তু আমি মন দিয়ে এই কাজটি করি। সারা বছরই আমার ক্রেতা আছে। তারা সারা বছর পিঠা খায় বলেই আমিও সারা বছরই বিক্রি করতে পারি৷’
সুলতান বলেন, শীতকালে সন্ধ্যা হলেই বেড়ে যায় ক্রেতা সমাগম। মাঝেমধ্যে বিক্রি চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দোকানে ভিড় করেন পিঠা খেতে। অনেকে কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরার পথে সন্ধ্যায় পিঠা নিয়ে যান।
পিঠা বিক্রি করে লাভ সম্পর্কে তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময় প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করতে পারি। কিন্তু শীতকালে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়৷ এতে লাভ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এ সময় বিক্রি অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমাকে সহযোগিতা করার জন্য আরও চারজনকে নিয়েছি। তাদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিতে হয়।
পিঠা বিক্রির মাধ্যমে অভাব কমেছে উল্লেখ করে সুলতান বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে ও ছেলেকে কলেজে পড়াশোনা করাচ্ছি। ছোট মেয়েটাকে এবার কলেজে ভর্তি করা হবে। পিঠা বিক্রি করেই সংসার চালিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারছি। আমি পড়াশোনা করে দেশের জন্য কিছু করতে পারিনি। তবে ছেলেমেয়েরা একদিন আমার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশা করি।’