এবার জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের স্লোগান হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তুলে ধরবে।
২৪ ডিসেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ শব্দটি বেছে নেয়া হয়েছে। এ ধারণায় ই-নথি ব্যবস্থা, স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম, অনলাইন শ্রমশক্তি, ক্যাশলেস সোসাইটি এবং পেপারলেস যোগাযোগব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা যেমন আমাদের দলীয় অঙ্গীকারে থাকবে, তেমনি আগামী নির্বাচনের ইশতেহারেও থাকবে। আমরা জাতিকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেব।’
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া নিউজবাংলাকে জানান, সম্মেলন উপলক্ষে চূড়ান্ত করা হয়েছে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের তালিকা, যা বুধবার সকালে বিতরণ করা হবে। মঞ্চ তৈরির কাজ এগোচ্ছে। গুছিয়ে আনা হয়েছে তৃণমূলের সম্মেলন।
এবারের সম্মেলনের বাজেট শুরুতে ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা করা হলেও পরে ৩০ লাখ কমিয়ে ৩ কোটি ১৩ লাখে নামিয়ে আনা হয়। অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় এবার কোনো বিদেশি অতিথিকে নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে না। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এক দিনে, সাদামাটাভাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অর্থ-উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফর উল্লাহ মঙ্গলবার জানান, ২৩ ডিসেম্বর রাতে মঞ্চ চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হবে। নৌকা এবং পদ্মা সেতুর আদলে বানানো মঞ্চে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর ছাপ থাকবে। ইংরেজি ‘এল’ আকৃতিতে বানানো মঞ্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চার জাতীয় নেতা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি থাকবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, এবার ৬ হাজার ৬০৩ জন কাউন্সিলর ও ১৩ হাজার ২০৬ জন ডেলিগেট থাকছেন। সাধারণত জনসংখ্যার ভিত্তিতে কাউন্সিলর নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতি ২৫ হাজারে একজন কাউন্সিলর। আর একজন কাউন্সিলরের বিপরীতে দুজন ডেলিগেট।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্যসচিব মির্জা আজম বলেন, ‘এবার ডেলিগেট বেশি হবে। কেননা তালিকার বাইরেও অনেকে বিশেষ বিবেচনায় ডেলিগেট থাকবেন।’
দলটির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭০টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র বিষয়ক উপকমিটির সদস্যসচিব ড. সেলিম মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-পরিবর্ধন শেষে গঠনতন্ত্রের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে।’
উপকমিটির একজন সদস্য জানান, প্রচার কমিটির পোস্টার ও ব্যানারের কাজও শেষ পর্যায়ে। সম্মেলনে পরিবেশনের জন্য সাংস্কৃতিক দলের মহড়া চলছে। সম্মেলনের দিন সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘কাউন্সিল দীর্ঘ সময় ধরে দুই দিনে হয়ে আসছিল। কিন্তু এবারে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের জায়গায় এক দিনে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এক দিনেই তা শেষ হবে। তবে সাদামাটা হলেও লাখ লাখ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, কাউন্সিলর, ডেলিগেট আসবেন। তাদের উচ্ছ্বাসের কোনো ঘাটতি থাকবে না।’
বিদেশি অতিথি না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমদ বলেন, ‘এবার নেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে সাদামাঠা সম্মেলন। এ কারণে এবার সম্মেলনে কোনো বিদেশি রাজনীতিবিদদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিমন্ত্রণ জানানো হবে।’
২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে নবমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।