সম্মেলন না করে প্রেস রিলিজে ছাত্রলীগের বেশ কিছু কমিটি ঘোষণা হওয়া নিয়ে যে সমালোচনা, তা থেকে বের হয়ে আসতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব।
দায়িত্ব পাওয়ার পরদিন বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করতে এসে এই ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
এক প্রশ্নে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত কমিটিতে করোনার কারণে কিছু প্রেস কমিটি হয়েছে। সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমনটি করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন ছাত্রলীগের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অতীত সোনালী ইতিহাসে ফিরে যাবে। আমরা যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন প্রতিটি সপ্তাহে আপনারা সম্মেলনের উৎসব দেখবেন।
‘কোনো না কোনো জেলা, উপজেলা প্রতি সপ্তাহে, প্রতি দশদিনে বা মাসে আপনারা সম্মেলনের উৎসব দেখবেন। এতটুকু নিশ্চয়তা আমরা আপনাদের দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যেখানে ৭৬ বয়সে সারা বাংলাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন, আমরা সেখানে ২৯-৩০ বছর বয়সে কেন পারব না। আমাদের পারতে হবে।’
ছাত্রলীগ নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে ইনান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা বাংলাদেশে চষে বেড়ানোর ম্যান্ডেট ধারণ করেন। আমরা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও ছাত্রলীগকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনে সমগ্র বাংলাদেশের অগি-গলি চষে বেড়াব। আর এটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রীর প্রকৃত কর্মী হতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সব ইউনিটের সব ভালো কাজের অংশীদার যেমন আমরা, তেমনি সব খারাপ কাজের দায়ভারও আমাদের দুইজনের। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের এই ভার দিয়েছেন, সেটি আমাদের গ্রহণ করে চলতে হবে। গঠনতন্ত্র মেনে এবং বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ উপহার দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এ ক্ষেত্রে আমরা সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি।’
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো সংবাদকর্মী যেন ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার না হন সেজন্য ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের সহযোগিতা চান সমিতির সদস্যারা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের কেউ যদি এই ধরনের ন্যাক্কারজনক মনমানসিকতার কাজ করে, তাহলে তাদের ছাড় দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব বলে আমরা আপনাদের শতভাগ আশ্বস্ত করছি।’
সংগঠন নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযোগী দক্ষ মানুষ আমরা হতে চাই। ছাত্রলীগে অংশিদারিত্বমূলক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক সেটিই আমরা চাই। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদকে কার্যকর করার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করবো। দায়িত্বকে যদি আমরা আরও বেশি বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারি তাহলে সংগঠন আরও বেশি গতিশীল হবে বলে আমরা মনে করি। এতে সাংগঠনিক জবাবদিহীতা থাকবে, কেন্দ্র এবং তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হবে।’
তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে যদি নেতৃত্ব আনা যায় তাহলে অনেক বেশি ভালো নেতৃত্ব নিয়ে আসা সম্ভাবনা থাকে। সাংগঠনিক এবং গঠনতান্ত্রিক নিয়মগুলো প্রতিপালনের চেষ্টা আমরা করবো।’
সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন। সেরকম একটি স্মার্ট সম্পর্ক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। এগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।
‘তবে আমরা এগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে দায়সারাভাবে, উটের মতো বালির মধ্যে মুখগুজে থাকব, সেটি হবে না। আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের স্বার্থে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন এবং ভিশন বাস্তবায়নের স্বার্থে দায়বদ্ধ থাকব।’
এবার ছাত্রলীগের কেন্দ্র এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক ইনান ছাড়া তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ছিলেন।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সবসময় আন্তরিক। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উপস্থিত ছিলেন।