সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এ দেশে সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এখানে ধর্ম পালনে কারও কোনো বাধা নেই।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খ্রিষ্টান ধর্মবলম্বীদের সঙ্গে বড়দিনের শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিনিধিদলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটিই বলব, এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা দেশে শুধু একটি ধর্ম তো আর না। আমাদের দেশে সব ধর্মের মানুষই আছে। তাদের কল্যাণে আমরা কাজ করি।…আমরা চাই আমাদের দেশটা সকল ধর্মের জন্য। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মানুষ এক হয়ে বাস করবে। কারণ, দেশের উন্নয়নটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। যার যার ধর্ম সে পালন করবে এতে কোনো বাধা নেই। উৎসব কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে পালন করি।’
‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই স্লোগানটি তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা রয়েছে, আমরা সেটি মেনে চলি। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।’
যিশুখ্রিষ্টই মানবকল্যাণ বা মানবধর্ম শিখিয়েছেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতাও সেটি বিশ্বাস করতেন।’
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর অনেক ঝড় গিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১-এর নির্বাচনের পর খ্রিষ্টান বা হিন্দু বৌদ্ধ বা মুসলমান কেউই রক্ষা পায়নি। সবার ওপরেই আঘাত এসেছে।
‘আমরা ছুটে ছুটে গিয়েছি সব জায়গায়, দেখেছি। যেমন বানিয়াচং গির্জায় বোমা হামলা অথবা সেই ভাঙ্গুরার ফুলজানা ইউনিয়নে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছিল। আসলে আওয়ামী লীগ করে বলেই তাদের ওপর বিএনপি অত্যাচার করেছিল।’
যেখানে যখনই সমস্যা হয়েছে, আওয়ামী লীগ পাশে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ আমরা বিশ্বাস করি, সব মানুষের জন্যই কাজ করতে হবে।’
‘যারাই পিছিয়ে তাদের সামনে আনব’
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার অঙ্গীকারের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এখানে একটি কথা এসেছে হিজড়াদের বিষয়টি। আপনারা জানেন আমাদের সংবিধানেই কিন্তু অনগ্রসর যে জনগোষ্ঠী তাদের কল্যাণের কথা বলা আছে। হিজড়াদের আমরা কিন্তু সংবিধানেই স্থান দিয়েছি।
‘তা ছাড়া আমাদের ইসলাম ধর্মেও আছে, কোনো হিজড়া সে যদি মেয়ে সেজে থাকে বা ছেলে সেজে থাকে, তাহলে সে পিতামাতা তার সম্পদে সমান অধিকার, যেমন তার ছেলে মেয়ে পাবে তেমনই হিজড়া সন্তান হলেও পাবে। যে মেয়ে সাজবে, সে মেয়ে হিসেবে পাবে; আর যে নিজেকে ছেলে দেখাবে, সে ছেলে হিসেবে পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও আমি জানি, অনেকে নিজের আপন ভাইবোনেরই সম্পদ দিতে চায় না। তাহলে তাদের দেবে কেন? এ কারণে আমাদের প্রত্যেকটা চাকরির ফরম বা আইডি কার্ড, সব জায়গায় আমরা নারী-পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গ থাকে। কাজেই তাদের স্বীকৃতিটা আমরা কিন্তু দিয়েছি।
‘সেই সঙ্গে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এ দেশে কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সেখানে কিন্তু এই হিজড়া সম্প্রদায়কে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
‘তারা তাদের নিজের পরিবারে লালিতপালিত হবে। তাদেরও চাকরি করার বা কাজ করার বা ব্যবসা করার সমান অধিকার আছে। সেটাও আমরা নিশ্চিত করে দিয়েছি। এখানে কিছু অসচেতনতা ছিল, কিন্তু আমরা সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছি।’
বেদেদের জীবনমান উন্নয়নেও তার সরকারের চেষ্টা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারাও নৌকায় থাকত, আর মাছ ধরে চলত। প্রত্যেকের জন্য বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি ও জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এই সম্প্রদায়দের কেউ যদি কাজ দেয় বা প্রতিবন্ধীদের কাজ দেয়, তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা আমরা দিচ্ছি।’