আগামীতে কে ক্ষমতায় আসবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার জনগণের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সারা দেশে মানোন্নয়ন করা ১০০টি মহাসড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, বাংলাদেশের মানুষ এরপরেও যারা বলে আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই নাকি করে নাই। দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করবে কি না, সেটাই আমার প্রশ্ন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আর ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এর বাহিরে যারা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কী করেছে আর আওয়ামী লীগ সরকার কী করেছে? আমি আশা করি দেশবাসী অন্তত একটু সেটা বিবেচনা করে দেখবেন।
‘আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে। আমরা বিশ্বাস করি গণমানুষ যেন ভালো জীবনযাপন করতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার প্রসার ঘটনো, প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্ঞান ও দক্ষতায় প্রতিটি বাঙালি যেন তৈরি হয়, সে লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এ দেশের মানুষকে একটু শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। এটা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অগ্নি সন্ত্রাসকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এ ধরনের মানসিকতার কেউ যাতে দেশের…আর আমাদের স্বাধীনতা বিশ্বাস যারা করে না, যারা জয়বাংলা স্লোগান দিতে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এ দেশের কোনো উন্নতিও চায় না। সেই কথা সকলকে স্মরণ রাখতে হবে। কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল আর কখন তারা দুর্নীতির কবলে পড়ে নিজের জীবনমান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছিল, এটা সকলকে স্মরণ করতে হবে।
‘জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চান। আমি শুধু এটুকু বলব, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। ক্ষমতায় আসলে জনগণের কল্যাণেই কাজ করে আর আমরা কাজ করেই যাব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি, ধ্বংসই করেছে, তাদের প্রশ্ন করি, ১০০টি মহসড়কের নামের তালিকা আমরা বললাম। অধিকাংশ সড়ক একসময় আমরা তৈরি করেছি। এখন উন্নত করে দিলাম। আর নতুন সড়ক করে দিলাম।
‘একশ সেতু এক দিনে উদ্বোধন, ১০০ সড়ক এক দিনে উদ্বোধন, এটা অতীতে কেউ করতে পেরেছে? পারেনি। পারে আওয়ামী লীগই, এটাই প্রমাণিত সত্য।’
‘জুতা হাতে রাস্তায় চলতে হয় না’
বর্তমান সরকারের সময়ে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার মনে হয় দেশের আর কোনো সড়কই বাকি নেই। এই ১০০টি সড়ক, যেগুলো আগে করা হয়েছিল, সেগুলোকে উন্নতমানের করা হলো।
‘খুব নিরাপদে সড়ক যাতায়াতে বড় সুবিধা হবে যেটা, অর্থনৈতিকভাবে এসব অঞ্চলের মানুষ লাভবান হবে। আমরা যখনই সরকারে এসেছি, যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি শুধু সড়কই না; রেলপথ, আকাশপথ এবং নৌপথ সব ক্ষেত্রেই আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। উন্নয়নের যে মূল চাবিকাঠি, একটা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থানীয়ভাবে, অর্থাৎ উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যন্ত হাঁটা পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগে মানুষ স্যান্ডেল বা জুতা হাতে করে রাস্তা দিয়ে চলত। এখন আর সেভাবে চলতে হয় না।
‘এখন স্যান্ডেল, জুতা পরার ক্ষমতাও যেমন হয়েছে, মাথাপিছু আয়ও যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে চলার সুযোগটাও হয়েছে। পাশাপাশি রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল, গাড়ি সবই চলাচল করতে পারে। সমগ্র গ্রাম পর্যায়ে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আমরা গড়ে তুলেছি।’
সড়ক নিরাপত্তায় প্রশিক্ষণ ও বিশ্রামাগারের তাগিদ
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রাইভার ও চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এখানে কতগুলো কাজ করতে হবে। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর জন্য ড্রাইভার ও হেলপারদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ব্যাপকভাবে। সেই সঙ্গে সড়কপথে চলতে হলে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেই সম্পর্কে একদম স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে হবে।
‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়ে, হাটে-ঘাটে প্রদর্শন করতে হবে। আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া আছে, টেলিভিশন আছে। এগুলোর মাধ্যমে এটার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। আমরা সেতু বা সড়ক করে দিচ্ছি, কিন্তু এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, যথাযথ ব্যবহার করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। বাস-গাড়ি যেটাতেই চড়েন না কেন, কোনো কিছু রাস্তায় ছুড়ে ফেলবেন না। প্রত্যেকের কাছে ময়লা ফেলার ব্যাগ রাখবেন। তার ভেতরে ফেলবেন এবং জায়গামতো ফেলে দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা চালক, মহাসড়কগুলোতে তাদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করা। অন্তত কয়েক কিলোমিটার চলার পর তারা যেন যথাযথ বিশ্রাম নিতে পারে, এ ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় করা হচ্ছে।
‘এটা হিসাব মতো কতক্ষণ একটানা চলতে পারে। দুই ঘণ্টা বা তিন ঘণ্টা, তারপরেই কিন্তু রেস্ট দরকার বা বিকল্প কাউকে রাখতে হবে। তাহলে এক্সিডেন্ট কমে যাবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রায় সবাই ড্রাইভার ব্যবহার করেন। নিজেরা গাড়ি চালান না। সেই ড্রাইভার সময়মতো খাবার পানি বা বিশ্রাম পেল কি না, এটা গাড়ির মালিকদের খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে গেলে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে আর এক্সিডেন্ট হবে। সেটা যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘবদ্ধ পিটুনির মতো কোনো ঘটনা না ঘটাতে জনগনকে আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি বিষয় আমি বলব, একটি এক্সিডেন্ট হলো বা একটি মানুষ ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল, সেই ড্রাইভার কিন্তু আর গাড়ি থামায় না; ভয় পায়।
‘কারণ সঙ্গে সঙ্গে জনগণ দুর্ঘটনা কবলিতকে সাহায্য না করে ড্রাইভারকে মারতে থাকে। গণপিটুনিতে ড্রাইভার মারাও যায়। এই কাজটা দয়া করে কেউ করবেন না। কেউ ইচ্ছা করে মানুষ মারে না। যখন এক্সিডেন্ট হয়, এটা ড্রাইভারের জন্যও হতে পারে বা পথচারীর জন্য হতে পারে, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যদি ধরেন থানায় দিয়ে দেন, পুলিশে দিয়ে দেন, বিচার হবে। আমরা সড়ক আইনও করেছি এটা বিচারের জন্য, কিন্তু গণপিটুনির জন্য যেটা হয়, এক্সিডেন্ট হলে ড্রাইভার ভয়ে পালাতে গিয়ে তার ওপর দিয়েই চলে গেল। অথচ মানুষটি কিন্তু বাঁচতেও পারত।
‘এই ভীতি থেকে ড্রাইভারকে মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের দায়িত্ব। ড্রাইভারকে পিটিয়ে মেরে ফেলে সমস্যার সমাধান হবে না। এ বিষয়ে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন হতে হবে।’