বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কি কম

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:২১

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মধ্যে রয়েছে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পেনশন ফান্ড, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, বিএসইসির নিবন্ধিত এলিজিবল ইনভেস্টর, ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংকও ডিএসইর ডিলার, করপোরেট বিনিয়োগকারী। পুঁজিবাজারে তাদের আরও অংশগ্রহণের বিষয়ে বহু আলোচনা আছে। কিন্তু আসলে কি তাদের বিনিয়োগ কম?

পুঁজিবাজারের চলমান পতনের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের আক্ষেপ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অন্য দেশে ৯০ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ১০।

এ নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ছে না। তবে তা কি মোট বিনিয়োগকারীর তুলনায় আসলেই ১০ শতাংশ? পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মানতে নারাজ।

কারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মধ্যে রয়েছে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ওরাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যেটা ক্যাপিটালাইজেশনের প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ হবে।

‘এ ছাড়া ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংকও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। ডিএসইর যত ডিলার আছে সবাই এই তালিকার মধ্যে পড়ে। আইসিবিও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আরেকটা হলো করপোরেট বিনিয়োগকারী। তারা প্রাতিষ্ঠানিক না হলেও বাজারে তাদের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে।’

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পেনশন ফান্ড, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হতে পারে। কোনো গার্মেন্টস মালিক তিনি প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনলে সেটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আরেকটা আছে- বিএসইসির নিবন্ধিত এলিজিবল ইনভেস্টর, যারা বিডিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী।’

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কি কমলালী বলেন, ‘আমি মনে করি না প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ঘাটতি আছে দেশে। গত মঙ্গলবার ৩০০ কোটি টাকা এক্সট্রা আসল, সেটা কোত্থেকে আসল? ওই যে নিয়ে বসে ছিল টাকা।’

তিনি বলেন, ‘অন্যরা বলেন ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগ, আমি বলি এটা ৮০ শতাংশ। বিষয়টা হচ্ছে যে হাই নেটওয়ার্ক ইনডিভিজুয়ালস যারা আছেন, তারা মোটামুটি ৬ মাস থেকে এক বছরের জন্য বিনিয়োগ করেন। এই বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা আছে, কিন্তু তারা সাইডে বসে আছেন। দুদিন থেকে ভলিউম বেড়েছে, কারণ তাদের অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে।’

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই বা তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন এই কথাটি সত্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর যে কথা বলা হয়, সেটা হবে যদি বলেন ইন টার্মস অব ইনভেস্টরস নাম্বার। কিন্তু ইন টার্মস অফ ইনভেস্টমেন্ট যদি বলেন, তাহলে ৯০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ মাত্র ১০ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই, এই কথা বলা বা প্রচার করা বাজারের জন্যও খারাপ। এটা মানসিকভাবে বিনিয়োগকারীদের দুর্বল ও বিনিয়োগ বিমুখ করে তোলে। বাস্তবতা ভিন্ন কথা, কারণ বাজারের ৯০ শতাংশই বিনিয়োগই প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের।

শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো- যদি বিনিয়োগকারী না থাকে, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও নাই, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীও শেয়ার বিক্রি করে চলে গেছে, তাহলে শেয়ারগুলো কি ডাস্টবিনে পড়ে আছে? যারা কিনেছে তারা কি বিনিয়োগকারী নয়?’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি বিনিয়োগকারী বেশি হারে কমে গেছে যেটার কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যক্তি বিনিয়োগকারী হবে।’

ডিএসইর সাবেক সভাপতি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছেই বেশি শেয়ার আছে। স্পন্সরের কাছেই তো আছেই। স্পন্সররা কেউ ৩০, ৪০, ৫০, ৭০ শতাংশ হোল্ড করে। গ্রামীণফোন, স্কয়ার কত হোল্ড করে?

‘বাটা, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর মতো কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিট দেখতে হবে। এসব কোম্পানির শেয়ার কারা হোল্ড করছে? ১০০টা কোম্পানির সব শেয়ার, বাজার মূলধন যা, দেখা যাবে ৫টা কোম্পানির বাজার মূলধন তার সমান। সে জন্য বড় কোম্পানিগুলো কারা হোল্ড করছে? যদি বলা হয়, তারা বিনিয়োগকারী নয়, তাহলে কিছু বলার নাই।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর বিও আছে এক লাখ। তারা কোম্পানিগুলোর কত শতাংশ শেয়ার হোল্ড করে? ধরা যাক, একটা করে ৫০০ জন ৫০০টি শেয়ার হোল্ড করে, আর একটা বিও থেকেই করা হয় পাঁচ লাখ। একটা ব্যাংক হোল্ড করে মনে করুন ৫০০ কোটি, আবার এই ৫০০ কোটি হোল্ড করতে ২০ হাজার বিও লাগবে।’

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কি হাত গুটিয়ে বসে?শাকিল রিজভী বলেন, ‘এই বাজারে সবাই লাভ করতে আসে। ক্যাপিটাল মার্কেট বা পুঁজিবাজার। সবাই আসে পুঁজি বানাতে। এখন কোনো শেয়ারের ভ্যালু ১০০ টাকা, এটাকে স্পেকুলেশন করে বানানো হয়েছে ৫০০ টাকা। এটার পেছনে খেলা হয়েছে, কারা করেছেন সেটা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু এখন যে প্রাইসে আছে সেটা কেনার প্রাইস নয়, তাহলে একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কেন সেটা কিনবেন?

‘কেনার লোক ঠিকই আছে। রিজনেবল প্রাইসে আসুক। বলা হয়, বায়ার নাই, কিন্তু ঠিকই আছে কিন্তু রেট খারাপ। একটা ২০ লাখ টাকার গাড়ি কেউ কিনছে না। ১৫ বা ১৬ লাখ টাকায় দেন সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে। কিন্তু ২০ লাখ টাকার গাড়ি দাম হাঁকছে ৩০ লাখ টাকা ফ্লোর প্রাইস, কেনেন? কেউ কিনবে?’

আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘এখন প্রাতিষ্ঠানিকরা কিনছে না। কারণ, ডিসেম্বর ক্লোজিং, তাদের অ্যাডজাস্টমেন্ট আছে। ধরা যাক, ইবিএল। তারা তো টাকা নিয়ে এসেছে ব্যাংক থেকে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের অ্যাডজাস্টমেন্ট করে, পেমেন্ট করে নতুন করে শুরু করতে হবে। যার কারণে তাদেরও একটা সমস্যা আছে। অনেকেই গত মাসেই অ্যাডজাস্টমেন্টের হিসাব, টাকা পয়াস যা বের করার তা করে ফেলেছে। এখনও অনেকেই করবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।’

করণীয় কীআহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘বিনিয়োগকারী ঠিকই আছে, আসলে প্রয়োজন ডিএসইর রিফর্মেশন, মার্জিন রেগুলেশনে, গভর্ন্যান্স সিস্টেমে এবং সেটা কন্টিনিউয়াস হতে হবে। আমরা এখন ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে আছি। যখন ইমার্জিং মার্কেটে ট্রান্সফার হতে গেলে দুই থেকে তিনটি জিনিস খুব প্রয়োজন। সেটা হলো- ১. গভর্ন্যান্স সিস্টেম, ২. লিক্যুইডিটি অফ শেয়ারস অ্যান্ড মানি ই দ্য মার্কেট, ৩. পলিসি কনসিস্টেন্সি ও ৪. রিফর্মেশন।’

তিনি বলেন, ‘যখনই ইমার্জিং মার্কেটে যাব, তখন বাজারকে অন্যরূপে দেখতে পাব। এই রিফর্মসগুলো না হলে বাজারের উন্নয়ন আমরা যেভাবে দেখতে চাই। সেভাবে পাব না।’

‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের রিফর্ম যদি বলি, ডিএসই মনে হয় বিশ্বে একমাত্র এক্সচেঞ্জ যেখানে নামকাওয়াস্তে রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট আছে, তবে ১০ জন অ্যানালিস্ট রেখে যে একটা রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট গড়ে উঠবে, তারা রিসার্চ করে পলিসি মেকিং বোর্ডে দেবে, প্রতি ১০ বা ১৫ দিন পরে রিসার্চ পেপার বের করবে এবং মানুষ তা কিনে নেবে, এসব বিষয় নাই। যা খুবই দরকার’-যোগ করেন লালী।

তিনি আরও বলেন, ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স ডিপার্টেমেন্ট আছে, কিন্তু তার কাজ কী? এই যে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট আসে লিস্টেড কোম্পানির, সেটা করপোরেট গভর্ন্যান্স ডিপার্টমেন্ট দেখবে সেখানে হিডেন কিছু আছে কি না, যদি থাকে বিএসইসিকে জানাবে। বিএসইসি বলবে ব্যাখ্যা চাও, তারা ব্যাখ্যা চাইবে। এ জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। তারা সারা বছর যে রিপোর্ট আসে সেগুলো দেখবে, কোথাও ভুল আছে কি না। কারণ, কোনো পিএসআই আসলে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি যুক্ত হয়ে যান।

‘এখন কোনো কোম্পানির ইপিএস দেখাল ২ টাকা, সেটা আসলেই আছে কি না, নাকি তারা লুকিয়ে ভুয়া একটা হিসাব দিয়েছে। এই জিনিসটা যদি করপোরেট গভর্ন্যান্স ডিপার্টমেন্ট যদি দিতে পারে তাহলে বিনিয়োগকারীরা আরও ইনফর্মড হবেন। এগুলো করতে হবে কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস দিয়ে। আমি জানি না ডিএসইতে কতজন সিএ আছে। সেজন্য এই ডিপার্টমেন্টকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’

ডিবিএর প্রাক্তন এই সভাপতি বলেন, ‘ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের ৯ বছর হয়েছে। আমি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই সময়ে ডিএসই কয়টা পলিসি সাজেশন দিয়েছে? বিএসইসি চেয়ারম্যান বললেন, একটাও না।

‘ডিএসই হলো মার্কেট এবং রেগুলেটরের মাঝখানে ব্রিজ। ডিএসই প্রাইমারি রেগুলেটর। সেকেন্ডারি রেগুলেটর বিএসইসি। এই ব্রিজের কাজ যদি ডিএসই করতে না পারে তাহলে ডিএসইকে তো এমডি নিয়োগ দিতে হবে। ডিএসইকে প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন করতে হবে। যতক্ষণ না করা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই আশা করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ১৪ দফা দাবি দিল, বাজার ডাউন, ভালো করার জন্য তা মেনে নিতে হচ্ছে। কেন? কেন ডিএসই সেই কাজগুলো করতে পারছে না? কেন ডিএসই বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসতে পারছে না। বলছে না যে, আপনারা কেন টাকা নিয়ে বসে আছেন? এটা কি বিএসইসির কাজ? বিএসইসি বড় বিনিয়োগকারীরা সঙ্গে বসছে?

‘বিএসইসির কাজ কি সেটা? বিএসইসির কাজ হলো রেগুলেট করা। ডিএসইর থেকে প্রস্তাব যাবে। বিএসইসি যেটা মানার মানবে, যেটা অ্যাড করার দরকার করবে, আর যেটা মাইনাস করার সেটা করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর