জমি থেকে পরিপুষ্ট আখ কাটা হচ্ছে। সেই আখ পরিষ্কার করে আটি বেঁধে মাথায় করে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। লোহার মেশিন দিয়ে চেপে চেপে বের করা হচ্ছে রস। মাটির চুলোয় বড় ড্রামে সেই রস জাল দেয়া হচ্ছে। ধোয়া উঠা রসে তৈরি হচ্ছে গুড়। সেই গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে আমোদিত গোমতীর চর।
এমন দৃশ্য এখন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিবিরবাজার গোমতীর চরে। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন এই আখের গুড় কিনতে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন গুড় তৈরির কারিগররা। গোমতীর চর ছাড়াও জেলার আরও কয়েকটি স্থানে তৈরি হচ্ছে আখের রস দিয়ে গুড় তৈরির কাজ।
গোমতীর বিস্তৃর্ণ চরে বহু বছর ধরে বংশ পরম্পরায় আখের রসের গুড় তৈরি করেন ইউনুস মিয়া। এ বছর ১৮০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন তিনি। কৃষিশ্রমিক ও গুড় তৈরির কারিগরদের মজুরিসহ দুই লাখ টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করছেন ইউনুস। সব ঠিক থাকলে গুড় বিক্রি করে তার মুনাফা হবে অন্তত দেড় লাখ টাকা।
ইউনুস জানান, তার বাবা ও দাদা আখের গুড় তৈরি করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর বেশ কয়েক বছর বন্ধ ছিল গুড় তৈরি। গত ১০ বছর ধরে তিনি আবার গুড় তৈরি করছেন।
প্রতি কেজি গুড় তিনি ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
আখের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
আখের গুড় তৈরির কারিগর ছোটন মিয়াকে নিয়ে আসা হয়েছে নাটোর থেকে। ছোটন বলেন, আখের রসের গুড় তৈরিতে জ্বালানি খরচ নেই। আখের পাতা ও ছোবড়া রোদে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবসহার করি। রসটাকে পরিষ্কার করতে শিমুল তুলা গাছের রস ব্যবহার করি।
একটি ড্রামে ৪০ কেজি রস দিয়ে ১৫ কেজি গুড় তৈরি করা যায় বলে জানান ছোটন।
গুড় তৈরির আরেক কারিগর সবুজ হোসেন জানান, দুই প্রকারের গুড় তৈরি করেন তিনি। এর একটি শক্ত গুড়, যেটাকে অনেকে পাটালি গুড় বলে। আরেকটা ঝোলা গুড়। চিতই ও ভাপা পিটা দিয়ে এ গুড় খেতে অনেক স্বাদের।
পাশের ছাওয়ালপুর গ্রাম থেকে প্রবাসী মিজানুর রহমান এসেছেন আখের গুড় কেনার জন্য। তিন কেজি পাটালি এবং দুই কেজি ঝোলা গুড় কেনেন তিনি। মিজান বলেন, ‘আমি সৌদি আরব থাকি। ওই দেশে কুইসরের (আখের) রসের মিডাই পাওন যায় না। খোলা পিডা (চিতই) দিয়ে খাওয়ার লাইগা মিডাই কিনছি। যেই স্বাদ বইলা শেষ করতাম পারতাম না।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কুমিল্লায় চিবিয়ে রস খাওয়ার জন্যই চাষিরা বেশি আখ চাষ করেন। এ বছর ৩০৪ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমিতে গুড়ের জন্য আখ চাষ করা হয়েছে।
আখ চাষিদের জন্য নানা রকম সুবিধার কথা উল্লেখ করে উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আখ চাষ বৃদ্ধিতে জেলার সদর দক্ষিণ, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম, মুরাদনগর, মেঘনা ও নাঙ্গলকোটে বিএসআরআই ৪১ জাতের ১ লাখ চারা বিনামূল্য বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদেরও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।