স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলারে পাকিস্তান শব্দটি সরিয়ে সেখানে বাংলাদেশ লেখে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। তবে এটি করতে কেন এত বছর লাগল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৪ হাজার ৫টি বিভিন্ন পিলারে একসময় পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত পাক লেখা ছিল, যেটাকে বিজিবি পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ও বিডি নাম লিখেছে। সে জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা কেন দীর্ঘদিন লাগল তা আমি জানি না, তবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু এখন সেটা আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে করা হয়েছে।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২২ উদযাপন অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় রাজধানীর বিজিবি সদর দপ্তরের বীর-উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী পুরো প্যারেড গ্রাউন্ড ঘুরে দেখেন এবং উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজিবি মহাপরিচালকসহ বিজিবি কর্মকর্তা ও উপস্থিত অতিথিদের অভিবাদন গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো বাহিনীর জন্য শৃঙ্খলা ও কমান্ড অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন ও চেইন অফ কমান্ড মেনে চলবেন।’
সীমান্ত রক্ষার মহান কর্তব্য বিজিবির ওপর রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ; মাদক, নারী ও শিশু পাচার আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনসহ সীমান্তবর্তী জনগণের জানমাল রক্ষা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা এসব দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন।’
দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বিজিবি সদস্যদের ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে আমাদের সংবিধান সংশোধন করে সীমানা ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো তখনও ভারতের সঙ্গে আমাদের ছিটমহল বিনিময় হয়নি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর যারা একের পর এক ক্ষমতায় এসেছিল, প্রায় ২১ বছর তারা কখনও আমাদের এই সীমান্তরেখা সুনির্দিষ্ট করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা এই উদ্যোগ নিই। দ্বিতীয়বার আমরা ক্ষমতায় এলে আমাদের উদ্যোগে ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাস করে সীমান্তরেখা সুনিদির্ষ্ট করা হয়েছে। এটা আমাদের বিরাট অর্জন।’
ছিটমহল বিনিময় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উৎসবমুখরভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছি, যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে আমাদের বর্ডার গার্ড অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।’
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের দেখাশোনা, আশ্রয়, তাদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও বিভিন্ন কাজে আমাদের বর্ডার গার্ড দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।
‘আওয়ামী লীগ সরকার এই বাহিনীর সক্ষমতা পুনর্গঠনের জন্য কাজ করে এবং নতুন আইন পাস করি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে একটি বিশ্বমানের ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-এর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবিলা ও ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স ও ট্যাক্টিক্যাল স্মার্ট সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেটা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রথমপর্বে পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৩১৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।’
‘ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে চারটি ব্যাটেলিয়ন ও সুন্দরবন এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজন করা হয়েছে। এতে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে চার শ দুই সীমান্ত নজরদারিতে আনা সম্ভব হয়েছে।’